বহুচর্চিত ন্যাশনাল হেরাল্ড দুর্নীতি মামলা নতুন মোড় নিল বুধবার, যখন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ইনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) দিল্লির আদালতে জানায়, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী এবং তাঁর পুত্র রাহুল গান্ধী এই মামলার সূত্র ধরে অবৈধভাবে ১৪২ কোটি টাকা লাভ করেছিলেন। ইডি-র পক্ষে আদালতে সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু এদিন এই দাবি করেন।
উলেখ্য, ইডি-র অভিযোগ, গান্ধী পরিবার ন্যাশনাল হেরাল্ড দুর্নীতির মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থে বিপুল অঙ্কের অর্থ ও সম্পত্তি ব্যবহার করেছেন, যা বেআইনি বলে সংস্থার দাবি। ইডি জানায়, ২০২৩ সালে এই মামলার প্রেক্ষিতে ৭৫১.৯ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। তার আগে পর্যন্ত এই অর্থ ও সম্পত্তি ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছিলেন অভিযুক্তরা। ইডি আরও দাবি করেছে, এই সম্পদের একটা বড় অংশ পাচার করা হয়েছে এবং কিছু অংশ নিজেদের কাছে রেখে অপরাধমূলক কাজ চালানো হয়েছে। তদন্তে উঠে এসেছে আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম, যেমন স্যাম পিত্রোদা, সুমন দুবে, প্রমুখ, যাঁদের যোগসূত্রও এই মামলায় খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলা প্রথম সামনে আসে ২০১২ সালে, যখন বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী এই অভিযোগ দায়ের করেন। তবে ইডি ২০১৪ সাল থেকে এই মামলায় আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করে। এই মামলার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ‘অ্যাসোসিয়েট জার্নালস লিমিটেড’ (AJL) — সংস্থাটি একসময় ন্যাশনাল হেরাল্ড, কোয়াম-ই-আওয়াজ ও নবজীবন নামক তিনটি সংবাদপত্র প্রকাশ করত। আর্থিক সংকটে পড়া এই সংস্থাটিকে ২০০৮ সালে অধিগ্রহণ করে ‘ইয়ং ইন্ডিয়ান প্রাইভেট লিমিটেড’ (Young Indian Pvt. Ltd.), একটি নবগঠিত সংস্থা যার ৭৬ শতাংশ শেয়ার ছিল সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীর মালিকানায়। বাকি শেয়ার ছিল প্রয়াত কংগ্রেস নেতা অস্কার ফার্নান্ডেজ ও মতিলাল ভোরার হাতে।সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর মূল অভিযোগ ছিল, এই অধিগ্রহণ নিয়ম বহির্ভূতভাবে এবং খুবই নামমাত্র মূল্যে (মাত্র ৫০ লক্ষ টাকা) সম্পন্ন করা হয়, যার ফলে গান্ধী পরিবারের মালিকানাধীন ইয়ং ইন্ডিয়ান সংস্থা AJL-এর কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়ে যায়। মামলার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো কংগ্রেস দলের অর্থ ব্যবহার নিয়ে ওঠা প্রশ্ন। অভিযোগ অনুযায়ী, কংগ্রেস দল ৯০ কোটি টাকার ঋণ মকুব করেছিল AJL-কে, যা রাজনৈতিক দলের তহবিলের নিয়ম লঙ্ঘন করে। কারণ, রাজনৈতিক দলের তহবিল করমুক্ত, এবং এমনভাবে সেই তহবিল দিয়ে ঋণ দেওয়া ও তা মাফ করা আইনি নয়।
ইডি-র মতে, এই ধরনের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে করমুক্ত তহবিল ঘুরপথে গিয়ে গান্ধী পরিবারের পকেটে পৌঁছে গেছে। ইডি ইতিমধ্যেই ইয়ং ইন্ডিয়ান ও অ্যাসোসিয়েট জার্নালস লিমিটেডের মিলিতভাবে ৭৫২ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। এবার সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে আরও সরাসরি আইনি পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে সংস্থাটি। এ নিয়ে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কংগ্রেস এই তদন্তকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলেই দেখছে এবং এই মামলার বিরুদ্ধে আদালতে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে। ন্যাশনাল হেরাল্ড দুর্নীতি মামলা আবারও ভারতের জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রে চলে এসেছে। ইডি-র সাম্প্রতিক দাবি শুধু গান্ধী পরিবার নয়, পুরো কংগ্রেস দলকেই এক অস্বস্তিকর অবস্থানে এনে ফেলেছে। এই মামলার ভবিষ্যৎ কোন দিকে গড়াবে, তা নির্ধারণ করবে তদন্তের গতি এবং আদালতের সিদ্ধান্ত।