উপত্যকার আকাশে যেন এক দীর্ঘ অন্ধকার রাতের পর ভোরের আলো ফিরেছে। টানা ১৯ দিনের গোলাগুলির আওয়াজ, ড্রোনের গুঞ্জন আর সেনা বুটের শব্দে আতঙ্কে দিন কাটানো কাশ্মীর, রাজৌরি, পুঞ্চ কিংবা আখনুর – সীমান্তের সেই জনপদগুলো যেন রবিবার রাতে ফিরে পেয়েছে বহু কাঙ্ক্ষিত স্বস্তি। ১১ মে রাতটি যেন ইতিহাসে স্থান পাওয়ার মতো – কারণ বহুদিন পর সেই রাতে গুলি চলেনি, আলো ভেদ করে আসেনি ড্রোনের চোখ, এবং প্রথমবারের মতো মানুষ নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পেরেছেন।
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি: অপারেশন ‘সিঁদুরে’ সফল, ড্রোন হামলার মাঝেও অমৃতসরে ক্ষয়ক্ষতি হয়নি
প্রসঙ্গত, এই শান্ত রাতের পেছনে রয়েছে অনেক দিন ধরে জমে থাকা অস্থিরতা। পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ হামলার পর থেকেই কাশ্মীর সহ সীমান্তের বহু জায়গায় উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছিল। প্রতিদিনের জীবনের ছন্দ ছিল পুরোপুরি বিঘ্নিত – রাত হলেই শুরু হতো গোলাগুলি, কখনও সেনা অভিযানের আওয়াজ, কখনও আবার ড্রোনে নজরদারি। সাধারণ মানুষ কার্যত ঘুমোতে ভুলে গিয়েছিলেন। স্কুল-কলেজ, দোকানপাট, বাজার – সব জায়গাতেই আতঙ্ক ছিল ছায়ার মতো। তবে রবিবার রাতের ছবি ছিল আলাদা। সেনাবাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, “জম্মু ও কাশ্মীরের আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর একটিও অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেনি। এই প্রথম একেবারে শান্তিপূর্ণ একটি রাত কাটাল রাজ্যের মানুষ।”রাজৌরি, পুঞ্চ, আখনুরের মতো উত্তেজনাপূর্ণ এলাকাগুলিতেও কোনও গুলির শব্দ শোনা যায়নি। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে গ্রামের মানুষজন ঘর থেকে বেরিয়ে আড্ডা দিয়েছেন, অনেকে দীর্ঘদিন পর পরিবারের সঙ্গে একসঙ্গে রাতের খাবার খেয়েছেন। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ডিজিএমও (Director General of Military Operations)-স্তরের বৈঠকের ঠিক আগের রাতে এই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, “বৈঠকের আগে এই রাতটি শান্তিপূর্ণ হওয়া খুব জরুরি ছিল। যুদ্ধ বা সংঘর্ষ কোনও সমাধান হতে পারে না – বরং শান্তির মধ্য দিয়েই এগোতে হবে।”শুধু কাশ্মীরই নয়, পাঞ্জাব ও রাজস্থানের সীমান্তবর্তী এলাকাতেও মানুষ অনেকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। পাঠানকোটের এক বাসিন্দার ভাষায়, “সংঘর্ষবিরতির ঘোষণা শোনার পর থেকেই ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছি। আশা করছি এই পরিবেশ বজায় থাকবে।”
উলেখ্য, রাজস্থানের জয়সলমীরের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, “এখানে সবকিছু স্বাভাবিক। দোকানপাট খুলেছে, দিনের সময়টুকু এখন নিশ্চিন্তে কাটছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবন আবার আগের মতো হচ্ছে।”১৯ দিন পর পাওয়া একটি শান্তিপূর্ণ রাত যেন গোটা উপত্যকার মানুষকে নতুন আশার আলো দেখাল। আপাতত সংঘর্ষবিরতির ঘোষণা বাস্তবায়নের দিকে তাকিয়ে সবাই। সাধারণ মানুষের কথা একটাই — “যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই। কারণ, স্থায়ী সমাধান আসে আলোচনার মাধ্যমে, অস্ত্রের জবাবে অস্ত্র নয়।”