৭ মে, বুধবার মধ্যরাত। পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশ এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ভারতের ‘এয়ার টু সারফেস’ মিসাইল হামলার মাধ্যমে শুরু হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। দেশের প্রতিরক্ষা ইতিহাসে এক গর্বের অধ্যায় যোগ করে এই অভিযান। নয়াদিল্লিতে বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবাদিক বৈঠকে এই অভিযানের প্রেক্ষাপট, কারণ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করেন কেন্দ্রীয় বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি। তাঁর সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন দুই বিশিষ্ট সামরিক কর্মকর্তা— লেফটেন্যান্ট কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কম্যান্ডার ব্যোমিকা সিং।
এই প্রতিবেদনে আমরা আলোকপাত করব লেফটেন্যান্ট কর্নেল সোফিয়া কুরেশির জীবন, কর্মজীবন এবং তাঁর অবদানের দিকে। গুজরাতের ভদোদরায় ১৯৮১ সালে জন্ম লেফটেন্যান্ট কর্নেল সোফিয়া কুরেশির। বায়োকেমিস্ট্রিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করলেও তাঁর জীবনের লক্ষ্য ছিল দেশের সেবা। এক সেনা পরিবারের সন্তান হিসেবে দেশের প্রতি তাঁর নিবেদন ছিল স্বাভাবিক। তাঁর ঠাকুরদা এবং দাদা ছিলেন সেনাবাহিনীর সদস্য, এমনকি তাঁর পিতা ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন। সেনার প্রতি এই পারিবারিক টানই তাঁকে সামরিক জগতে নিয়ে আসে। ১৯৯৯ সালে তিনি অফিসার্স ট্রেনিং অ্যাকাডেমি, চেন্নাই-এ প্রশিক্ষণ শুরু করেন এবং সফলভাবে কমিশন লাভ করে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন লেফটেন্যান্ট হিসেবে। এরপর ধাপে ধাপে তাঁর উত্থান হয় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্তরে। ২০০৬ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কঙ্গোয় সামরিক পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সোফিয়া। শান্তিরক্ষা অভিযানে তাঁর দক্ষতা ও নেতৃত্বগুণ তাঁকে একটি আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দেয়। ২০১৬ সালে তিনি আন্তর্জাতিক সামরিক মহড়া ‘এক্সারসাইজ ফোর্স ১৮’-তে ভারতীয় দলের নেতৃত্ব দেন। এটি ছিল ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত সবচেয়ে বড় বিদেশি সামরিক মহড়াগুলির মধ্যে একটি। অংশগ্রহণকারী ১৮টি দেশের মধ্যে সোফিয়া কুরেশি ছিলেন একমাত্র মহিলা অফিসার এবং ভারতীয় ৪০ সদস্যের দলের অধিনায়ক। তিনি ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর সিগন্যাল কর্পসের একজন দক্ষ অফিসার। সেনার বিভিন্ন অভিযানে তাঁর অসাধারণ ভূমিকার জন্য তিনি বহুবার সম্মানিত হয়েছেন। পঞ্জাব সীমান্তে ‘অপারেশন পরাক্রম’-এর সময়ে তাঁর কাজের জন্য তিনি জিওসি-ইন-সি-এর কাছ থেকে প্রশংসাপত্র পান। একইভাবে, উত্তর-পূর্ব ভারতে বন্যা ত্রাণে তাঁর নেতৃত্বে কাজের জন্য তিনি সিগন্যাল অফিসার ইন চিফ-এর কাছ থেকেও স্বীকৃতি পান।
উলেখ্য, সোফিয়া একজন মা ও স্ত্রী। তাঁর স্বামী মেজর তাজুদ্দিন কুরেশি মেকানাইজড ইনফ্যান্ট্রিতে কর্মরত এবং তাঁদের একটি ছেলে রয়েছে—সমীর কুরেশি। লেফটেন্যান্ট কর্নেল সোফিয়া কুরেশি শুধুই একজন সেনা অফিসার নন—তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নারী নেতৃত্বের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। অপারেশন সিঁদুরের মতো গুরুত্বপূর্ণ অভিযান তাঁর উপস্থিতি এবং নেতৃত্ব ভবিষ্যতের নারী প্রজন্মকে সেনাবাহিনীতে আসার অনুপ্রেরণা জোগাবে নিঃসন্দেহে।