বাংলা সাহিত্য ও সিনেমায় গোয়েন্দা, রহস্য এবং অনুসন্ধানের প্রতি এক গভীর ভালোবাসা রয়েছে। বিশেষ করে, সাহিত্যপ্রেমী বাঙালিদের মাঝে এটা প্রায়ই দেখা যায়, তারা অদ্ভুত রহস্য এবং রহস্যময় ঘটনাবলি নিয়ে নিজের মগজাস্ত্রের জড়িপ নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সত্যজিৎ রায় সৃষ্ট ‘ফেলুদা’ বা আর্থার কোনান ডয়েল রচিত ‘শার্লক হোমস’-এর মতো চরিত্রগুলির মাধ্যমে গোয়েন্দা কাহিনীর প্রতি এই আগ্রহ আরও তীব্র হয়েছে। তবে, পুরুষতান্ত্রিক গোয়েন্দা সমাজের মধ্যে এবার নতুন এক মিষ্টি চমক হতে চলেছে, আর সেটি হল ‘ডিটেক্টিভ চারুলতা’।
প্রসঙ্গত, জয়দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় তৈরি এই নতুন সিরিজ ‘ডিটেক্টিভ চারুলতা’কে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানো হয়েছে সত্যজিৎ রায় সৃষ্ট ‘ফেলুদা’ চরিত্রের প্রতি। এই সিরিজের কেন্দ্রীয় চরিত্র, প্রাইভেট ডিটেক্টিভ চারুলতা মিত্র, অভিনয় করেছেন সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায়। চারুলতা, একজন তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তার অধিকারী, সবার থেকে আলাদা। তার খুড়তুতো ভাই তপু ও তার সহযোগী হিসেবে সাধারণ রহস্য সমাধানে নিয়োজিত থাকে। কিন্তু চারুর বিশ্বাস, একদিন তারও ফেলুদা বা শার্লকের মতো খ্যাতি হবে। একদিন তার জীবনে আসে নতুন সহকারী ম্যাডি, এবং এখান থেকেই রহস্য শুরু হয়। কাহিনীর মূল পরতে আসা একটি ভয়ঙ্কর মৃত্যু ভবিষ্যদ্বাণী, যেখানে এক খ্যাতনামা তন্ত্রবিদ শ্রীমতী পরমা সেন তার মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী করেন এবং সেটি অবিশ্বাস্যভাবে সত্যি হয়। এই মৃত্যুর পেছনে যে রহস্য লুকানো, সেটি খোলাসা করার জন্য চারুলতা আরও গভীরে প্রবেশ করতে থাকে। একের পর এক রহস্যময় মৃত্যু তাকে সেই খুনির কাছাকাছি নিয়ে যায়, যার উৎস লুকিয়ে রয়েছে প্রায় তিন দশক আগে ঘটে যাওয়া এক অভিশপ্ত ঘটনায়। কেন এই একের পর এক খুন ঘটছে? চারুলতা কি পারবে এই মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন করে খুনিকে থামাতে, নাকি তার ভাগ্যে রয়েছে পরাজয়?
‘ডিটেক্টিভ চারুলতা’ সিরিজের অভিনেত্রী সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গোয়েন্দা চরিত্রটি সাধারণত পুরুষদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তবে এখানে এক তরুণী গোয়েন্দার চরিত্রে অভিনয় করা খুবই আকর্ষণীয়। বিশেষ করে, অ্যাকশন দৃশ্যগুলি শুট করা ছিল একটি চ্যালেঞ্জ, কিন্তু সেটে সবার মধ্যে আন্তরিকতা ছিল, যা কাজকে সহজ করে তুলেছিল। জয়দীপদা আমাদের অনেক সাহায্য করেছেন। পরিচালক জয়দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, “সুরঙ্গনা শুরু থেকেই চরিত্রটিকে নিজের করে নিয়েছিল। কঠিন অ্যাকশন দৃশ্য থেকে আবেগময় মুহূর্ত, সবেতেই তার অভিনয় ছিল সাবলীল।‘ডিটেক্টিভ চারুলতা’ সিরিজের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলিতে অভিনয় করছেন দেবমাল্য গুপ্তা (তপু), অনুজয় চট্টোপাধ্যায় (অরিন্দম লস্কর), পামেলা কাঞ্জিলাল (ম্যাডি), মল্লিকা মজুমদার (সিদ্ধেশ্বরী বসু), চৈতি ঘোষাল (মিসেস পরমা সেন), মানস মুখোপাধ্যায় (হেমাঙ্গ হাজরা), সবুজ বর্ধন (ললিত মোহন)। চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় আছেন জয়দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং গল্প ও সংলাপ রচনা করেছেন সৌমিত দেব। সিনেমাটোগ্রাফির দায়িত্বে আছেন অনির, সঙ্গীত পরিচালনায় প্রাঞ্জল দাস এবং সম্পাদনায় কৌস্তভ সরকার।
সারেগামাপা শেষ না হতেই প্লেব্যাকে আরাত্রিকা
উলেখ্য, ‘ডিটেক্টিভ চারুলতা’ সিরিজের মাধ্যমে গোয়েন্দা কাহিনীতে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে। এই সিরিজ শুধু একটি চমকপ্রদ রহস্য নয়, বরং এর মধ্যে রয়েছে ভিন্ন এক চরিত্র নির্মাণের চেষ্টা। যেখানে পুরুষ শাসিত গোয়েন্দা সমাজে এবার মহিলাদেরও নিজেদের জায়গা পেতে হবে। এবং, যদি সত্যি জানতে চান, ‘চারুলতা কি পারবে এই রহস্য উন্মোচন করতে?’, তাহলে আপনাকে চোখ রাখতে হবে সিরিজটির প্রতি পর্বে। ডিটেক্টিভ চারুলতা’ পাকা গোয়েন্দা সিরিজ প্রেমীদের জন্য এক চমৎকার উপহার হতে চলেছে।