থাইল্যান্ড ও মায়ানমারে ভুয়ো চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভারতে সাইবার প্রতারণার চক্রে জড়িত ২৮৩ ভারতীয় নাগরিককে উদ্ধার করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা সাইবার অপরাধীদের হাতে ক্রীতদাসের মতো বন্দি ছিলেন। অবশেষে, বাংলাদেশ, মায়ানমার, এবং থাইল্যান্ড প্রশাসনের সহযোগিতায়, সোমবার বায়ুসেনার বিমানে তাঁদের ভারতে ফেরানো হয়।
সূত্র অনুযায়ী, উদ্ধার হওয়া ২৮৩ জন ভারতীয়দের মধ্যে ৪২ জন তেলেগুভাষী। তাঁদেরকে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মায়ানমার ও থাইল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর পর, তাদেরকে ভুয়ো কল সেন্টারে কাজ করতে বাধ্য করা হয়, যেখানে সাইবার অপরাধী চক্র তাদের ব্যবহার করে ভারতের নাগরিকদের প্রতারণা চালাত। এরা প্রায় সকলেই চাকরির জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রলোভনে পা দিয়েছিলেন। কিন্তু মায়ানমার এবং থাইল্যান্ডে পৌঁছানোর পর, তাঁদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল এবং শর্তসাপেক্ষে অপরাধমূলক কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছিল। কিছুদিন পরে, একবার যখন ফাঁদে পড়া শুরু হয়ে যায়, তখন তাঁদের মুক্তির কোনো রাস্তা ছিল না। এই কঠিন পরিস্থিতিতে, তাঁরা কার্যত ক্রীতদাস হয়ে পড়ে ছিলেন।
উলেখ্য, ভারতের বিদেশ মন্ত্রক বিষয়টি জানার পর দ্রুত তৎপর হয় এবং যোগাযোগ করা হয় মায়ানমারের সেনাবাহিনী ও থাইল্যান্ডের প্রশাসনের সাথে। অবশেষে, ভারতীয় দূতাবাসের সহায়তায় ২৮৩ জন ভারতীয় নাগরিককে উদ্ধার করা হয়। সোমবার, ভারতীয় বায়ুসেনার বিমানে তাঁদের দিল্লি ফেরানো হয়। মায়ানমার, থাইল্যান্ড ও লাওসের সীমান্তবর্তী সোনালি ত্রিভুজ এলাকা অপরাধী চক্রের জন্য কুখ্যাত। প্রায় ৯,৫০,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বিস্তৃত এই পাহাড়ি অঞ্চলটি আন্তর্জাতিক সাইবার অপরাধীদের জন্য এক আদর্শ স্থান হয়ে উঠেছিল। এখানে এই অপরাধীরা নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করছিল, এবং এ থেকেই ভারতের বিভিন্ন স্থানে ফোন করে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিল। এছাড়া, ভারতের তদন্তকারী সংস্থাগুলি একাধিক ডিজিটাল ধরপাকড়ের পর এই অঞ্চলের তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিল। এরপরই ধাপে ধাপে গোটা চক্রটি উন্মোচিত হয়, এবং ভারতীয় নাগরিকদের উদ্ধারের কাজ শুরু হয়।
চরম লজ্জার সম্মুখীন হতে হপ্ল পাকিস্তানকে, ঢুকতে দাওয়া হলনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে
প্রসঙ্গত, ২৮৩ জন ভারতীয় নাগরিকের মুক্তি পরবর্তী সময়ে এটি একটি বড় জয় হিসেবে গণ্য হয়। তাদের উদ্ধার করার জন্য ভারতীয় সরকার, মায়ানমার, ও থাইল্যান্ডের প্রশাসন সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে। এটি প্রমাণ করে যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও দৃঢ় প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রয়োগের মাধ্যমে যে কোনো অপরাধ চক্রকে প্রতিহত করা সম্ভব। এটি ভারতের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। তবে, একইসাথে এই ঘটনার মাধ্যমে সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এই ঘটনা, বিশেষত থাইল্যান্ড এবং মায়ানমারের সোনালি ত্রিভুজ অঞ্চলের অপরাধী চক্রের কার্যক্রমের প্রকাশ, আমাদের সতর্ক করে দেয়। সাইবার প্রতারণা এবং অপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক সীমান্তের ব্যবধান কাটিয়ে একযোগে কাজ করার গুরুত্ব বাড়িয়ে তোলে। ভারতে নিরাপদ কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।