রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় কলকাতা অভ্যন্তরে আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে সিএবি (কলকাতা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন) যাত্রা শেষ করা প্রাক্তন উইকেটকিপার-ব্যাটার ঋদ্ধিমান সাহাকে বিদায় সংবর্ধনা প্রদান করে। প্রায় মাসখানেক আগে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন ঋদ্ধি। তার ক্রিকেট জীবনের দীর্ঘ পথচলা এবং অগণিত সাফল্যের পিছনে যাঁরা সমর্থন দিয়েছেন, তাঁদের প্রতি ঋদ্ধির কৃতজ্ঞতা ছিল স্পষ্ট।
উলেখ্য, মঞ্চের একদিকে ছিল একটি ছোট্ট ডাগআউট, যেখানে বিভিন্ন জার্সি ঝুলে ছিল—সাদা, হলুদ এবং নীল রঙের। কিছু জার্সি ছিল ভারতের, কিছু ছিল বাংলার এবং চেন্নাই সুপার কিংস, সানরাইজার্স হায়দরাবাদ-এর। পাশাপাশি ছিল প্যাড, গ্লাভস, ব্যাট এবং টুপি। সমস্ত আয়োজন ছিল শুধুমাত্র ঋদ্ধিমান সাহার জন্য। এদিন ঋদ্ধি মঞ্চে এসে এই আয়োজন দেখে খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, “আমার জন্য সিএবি এমন আয়োজন করবে, ভাবতেই পারিনি। এজন্য সিএবি-কে ধন্যবাদ জানাই। আমার এই পর্যন্ত পৌঁছানোর পিছনে সিএবি এবং বিসিসিআইয়ের সহযোগিতা ছিল অমূল্য। তাঁদের সাহায্য ছাড়া আমি কখনই এই সাফল্য অর্জন করতে পারতাম না।“ ঋদ্ধির ক্রিকেট ক্যারিয়ারের নানা দিক নিয়ে আলোচনা শোনা গেল অনুষ্ঠানে। প্রাক্তন সতীর্থ এবং বন্ধুদের ভিডিও বার্তায় ঋদ্ধির সাফল্য, তার সংগ্রাম এবং প্রতিভা নিয়ে আলোচনা হয়। ভিভিএস লক্ষ্মণ, শিখর ধাওয়ান, ঝুলন গোস্বামী, দীনেশ কার্তিকরা একে একে ঋদ্ধির সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। বিশেষ করে লক্ষ্মণ তাঁর প্রথম রনজি ম্যাচের কথা উল্লেখ করে বলেন, “ঋদ্ধি খুবই প্রতিভাবান খেলোয়াড় এবং জাতীয় দলে তার উপস্থিতি সবসময় বিশেষ ছিল।”
প্রসঙ্গত, প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় উপস্থিত থেকে ঋদ্ধির সাফল্য উদযাপন করেন। তিনি বলেন, “ঋদ্ধি দেশের সেরা উইকেটকিপার। মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো একজন তারকার যুগে ৪০টা টেস্ট খেলা সহজ নয়। তবে ঋদ্ধি কখনোই ছায়ার মধ্যে ঢাকা পড়েননি, তিনি এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ।” “ঋদ্ধির সাফল্য এবং কৃতিত্বে আমি গর্বিত। একজন ভালো খেলোয়াড়ের বিদায়ও যেন যথাযথ সম্মানিত হয়। সিএবি কর্তাদের ধন্যবাদ, এমন একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য।”ঋদ্ধির জীবনের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সিএবি তাকে বিভিন্ন স্মারক প্রদান করে। সিএবি সভাপতি স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় রুপোর কিপিং গ্লাভস তুলে দেন ঋদ্ধির হাতে। কেকেআর-এর পক্ষ থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে স্মারক দিয়ে বলেন, “ঋদ্ধি আমাকে বলেছিল যে আমি তার প্রথম ক্যাপ্টেন ছিলাম। এমন একজন ভালো ক্রিকেটারের অধিনায়ক হওয়া সত্যিই গর্বের বিষয়।” এছাড়া সিএসকে, সানরাইজার্স এবং গুজরাত টাইটান্সের পক্ষ থেকেও স্মারক দেওয়া হয় ঋদ্ধিকে।
আজ থেকে শুরু উচ্চমাধ্যমিক পরিক্ষা
এদিন ঋদ্ধির স্ত্রী রোমি, ছোটবেলার কোচ জয়ন্ত ভৌমিক, প্রাক্তন সতীর্থ লক্ষ্মীরতন শুরু এবং অনুষ্টুপ মজুমদাররা ঋদ্ধির সম্পর্কে নিজেদের মধুর স্মৃতির কথা শেয়ার করেন। অনুষ্ঠানটি ছিল এক আবেগপূর্ণ বিদায়ী মুহূর্ত, যা ঋদ্ধির অসামান্য ক্রিকেট জীবনের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। ঋদ্ধিমান সাহার এই সাফল্যময় যাত্রা ক্রিকেট ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।