রবিবার দুপুর ৩টে মাগাদ নাট্যব্যাক্তিত্ব শাঁওলী মিত্রের জীবনাবসান ঘটেছে। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্য জনিত সমস্যা এবং নিউমোনিয়াতে ভুগছিলেন, তবে হাসপাতালে যেতে চাননি তিনি। রবিবার বিকালে তিনি নিজের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে বাংলা সাংস্কৃতিক জগতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বাবা শম্ভু মিত্র এবং মা তৃপ্তি মিত্র দুজনেই বাংলা অভিনয় জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন, সুতরাং নাটকের সাথে তাঁর যোগ ছিল জন্ম থেকেই। মৃত্যুর দুবছর আগে তিনি নিজে ইচ্ছেপত্র লিখে গিয়েছিলেন, আর তাতেই তিনি জানিয়েছিলেন তাঁর শেষকৃত্য যেন সবার অগোচরে হয়, ঠিক সেই মতো এদিন বিকেলে বেহালার সিরিটি শ্মশানে শুধুমাত্র পারিবারিক লোকজনের সান্নিধ্যে তাঁর অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। তাঁর ইচ্ছে মতোই শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার পরেই তাঁর পালিতা কন্যা অর্পিতা ঘোষ, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর মৃত্যু সংবাদ দেন। সবার অজান্তেই চির ঘুমের দেশে চলে গেলেন শাঁওলী মিত্র।
ঋত্বিক ঘটকের “ যুক্তি তক্ক আর গপ্পো” চলচিত্রে তাঁর বঙ্গবালা চরিত্র এখনও মানুষের ভালবাসার জায়গা। ২০০৩ সালের সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার, ২০১২ সালের বঙ্গ বিভূষণ, ২০০৯ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কার তাঁর ঝুলিতে। তিনি ছিলেন বাংলা থিয়েটার জগতের একজন একনিষ্ঠ কর্মী। ২০১৪ সালের দীনবন্ধু পুরস্কারও তাঁরই নামে নামাঙ্কিত। ২০১২ সালে মহাশ্বেতা দেবী বাংলা অ্যাকাডেমির সভাপতি পদে পদত্যাগের পর শাঁওলী মিত্রকে সভাপতি পদের দায়িত্বভার দেওয়া হয়। ২০১১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মবর্ষ উপলক্ষে রাজ্যের তৈরি কমিটির চেয়ারপার্সন হিসাবে তাকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়। শুধু মাত্র নাট্য জগতে নয় একজন সমাজ সচেতক মানুষ হিসাবেও তাঁর ভুমিকা ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
সিঙ্গুর নন্দিগ্রাম আন্দোলনের সময় তাকে বার বার সমাজ সচেতকের ভুমিকাই দেখা গেছে, সামাজিক বেনিয়মের বিরুদ্ধেও তাকে সোচ্চার হতে দেখা গেছে বারংবার। শাঁওলী মিত্রের শেষ বয়সে অভিনয় না করতে পারার আক্ষেপ তাঁর নিজের গলাই শোনা গেছে বহুবার। তাঁর অভিনয় জীবনে তিনি বহু কাল জয়ী নাটক আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাটকগুলি হল, “কথা অমৃত সমান”, “পুতুল খেলা”, “বিতত বীতংস”, “হযবরল”, “ডাকঘর”, “গ্যালিলিওর জীবন”, “পাখি”, “পশু খামার”, “একটি রাজনৈতিক হত্যা” প্রভৃতি। পালিতা কন্যা অর্পিতা ঘোষের অনুরোধে তৈরি করেন “সীতা কথা” নাটক। “নাথবতী অনাথবৎ”-এর মতো নাটক বাংলা সাংস্কৃতিক জগতে অমর সৃষ্টি।
শাঁওলী মিত্রের মৃত্যুতে গভীর
ভাবে শোকাহত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তিনি জানিয়েছেন “বাংলা নাট্যজগতের নক্ষত্র
পতনে আমি গভীর ভাবে শোকাহত। শাঁওলী মিত্র আমার সাথে বহুদিনের সঙ্গী ছিলেন, সিঙ্গুর
আন্দোলনেও তিনি আমার সঙ্গী ছিলেন”। নাট্য ব্যাক্তিত্ব দেবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ শেষ
মুহূর্তে শাঁওলী দিকে আমি স্পর্শ করতে পেরেছি, এটাই আমার সৌভাগ্য। আমি আমার একজন অভিভাবক
হারালাম”।