গত প্রায় নয় মাস মহাকাশে কাটিয়ে, পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস। দীর্ঘ সময় ধরে মহাকাশে থাকার পর, সম্প্রতি তিনি প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে তাঁর মহাকাশযাত্রার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। বিশেষত, মহাকাশ থেকে ভারতকে কেমন দেখায় এবং হিমালয়ের অসাধারণ দৃশ্যের বর্ণনা তুলে ধরেছেন সুনীতা।
প্রসঙ্গত, মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে দেখা এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা। সুনীতা বলেন, "ভারত অসাধারণ।" মহাকাশ থেকে ভারতের দৃশ্যের বর্ণনায় তিনি বলেন, "ভারতীয় শহরগুলো আলোকিত, উজ্জ্বল এবং রঙিন। পৃথিবীর যে কোনো জায়গা থেকে ভারতকে চেনা যায়।" এর পাশাপাশি তিনি হিমালয়ের কথা বলেন, যেটি মহাকাশ থেকে একটি বিশাল ঢেউয়ের মতো দেখা যায়, যেন তা ভারতের কোলে ঢলে পড়ছে। সুনীতা আরো বলেন, "যতবারই আমরা হিমালয়ের ওপর দিয়ে গিয়েছি, ততবারই সেই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে অবাক হয়েছি।" সুনীতা উইলিয়ামস তাঁর বাবার জন্মভূমি ভারত সম্পর্কে গভীর ভালোবাসা এবং গর্ব প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, "ভারত একটি মহান দেশ, যার একটি দারুণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রয়েছে।" মহাকাশ অনুসন্ধানে ভারতের ক্রমবর্ধমান ভূমিকার প্রতি তাঁর উৎসাহও প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, "একদিন আমি বাবার দেশ ভারত ফিরে যাবো এবং আরো বেশি করে ভারতের মহাকাশ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবো।" ২০২৪ সালের জুন মাসে, সুনীতা উইলিয়ামস এবং মার্কিন মহাকাশচারী বুচ উইলমোর স্টারলাইনার মহাকাশযানে চড়ে মহাকাশে যাত্রা করেছিলেন। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে, তাঁরা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) থেকে ফিরতে পারেননি। এই যান্ত্রিক ত্রুটির ফলে, দীর্ঘ সময় ধরে তারা মহাকাশে আটকে পড়েন। পরে, ওই মহাকাশযানটি সুনীতাদের ছাড়াই পৃথিবীতে ফিরে আসে। এরপর, সুনীতাদের পৃথিবীতে ফেরার প্রক্রিয়া বেশ কিছু সময় ধরে চলতে থাকে। অবশেষে, সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোরকে ২৮৬ দিন পর মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হয় ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের ড্রাগন ক্যাপসুলে।
ইদের দিন আবহাওয়ার পূর্বাভাস: তাপমাত্রা ও বজায় থাকবে গরমের চাপ
উলেখ্য, বিশ্বব্যাপী মহাকাশ অনুসন্ধানে ভারতীয় অংশগ্রহণ বাড়ছে এবং সুনীতা উইলিয়ামস ভারতের বেসরকারি মহাকাশ উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, "ভারতীয় মহাকাশ প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।" সুনীতা উইলিয়ামসের মহাকাশযাত্রা শুধু তাঁর ব্যক্তিগত অর্জন নয়, এটি ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার একটি সাফল্য হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই মহাকাশচারী তার অভিজ্ঞতা এবং দেশে ফিরে আসার পর তাঁর ভবিষ্যত পরিকল্পনাগুলো সম্পর্কে উচ্ছ্বসিতভাবে জানান, "আমি আশা করি যে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার অংশ হতে পারবো এবং আরও নতুন প্রযুক্তি ও অনুসন্ধানে যুক্ত হতে পারবো।" সুনীতা উইলিয়ামসের মহাকাশে কাটানো সময়, তাঁর অভিজ্ঞতা এবং মহাকাশ গবেষণায় ভারতের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা, এসব এক নতুন দিগন্তের সূচনা করছে। ভারত মহাকাশ গবেষণায় একটি নতুন যুগের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যেখানে সুনীতার মতো মহাকাশচারী একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠবেন।