বাংলাদেশে গত কিছু বছরে ভারত-বিরোধী সুর এবং হিন্দু নির্যাতনের ঘটনাগুলোর প্রেক্ষিতে নয়া দিল্লি বাংলাদেশ সরকারের কাছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রেল প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ প্রত্যাহার করেছে। এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রেল যোগাযোগের উন্নয়ন এবং অন্যান্য পরিকাঠামোগত প্রকল্পের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে তুলেছে। যদিও ভারত সরকার এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো কারণ জানায়নি, তবে এই ঘটনা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের মধ্যে চলমান উত্তেজনার এক গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে উঠে এসেছে।
নয়া দিল্লি বাংলাদেশকে যে তিনটি রেল প্রকল্পের জন্য অর্থ সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেগুলো হল:
১. কাউনিয়া-দিনাজপুর পার্বতীপুর রেলপথের ডুয়াল গেজ উন্নীতকরণ: ২০১৮ সালে ভারত এই প্রকল্পে আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু সাত বছর পেরিয়ে গেলেও কাজ শুরু হয়নি। এই প্রকল্পের আর্থিক সহায়তা প্রত্যাহার করে নয়া দিল্লি, ফলে প্রকল্পটির ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
২.খুলনা-দর্শনা ডাবল লাইন প্রকল্প: এটি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ছিল, যার জন্য ভারত আর্থিক সহায়তা প্রদান করছিল। কিন্তু ভারত এই প্রকল্পেও আর্থিক সহায়তা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়, ফলে বাংলাদেশের রেল মন্ত্রণালয় এই প্রকল্প বাতিল করার ঘোষণা দেয়।
৩. বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ডুয়াল গেজ প্রকল্প: এই প্রকল্পটিও এখনো বাতিল করা হয়নি, তবে ভারত আর্থিক সহায়তা না দেয়ার কারণে বাংলাদেশের সরকারকে অন্য উৎস থেকে অর্থ জোগাড়ের চেষ্টা করতে হচ্ছে।
যদিও ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করেনি, তবে বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী অবস্থান এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ভারতবিদ্বেষী মনোভাবের প্রসার এই সিদ্ধান্তের পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে অনুমান করা হচ্ছে। বিশেষত, বাংলাদেশে সম্প্রতি হিন্দুদের উপর নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধি পেলে ভারত সরকার উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক হাসিনা সরকারের সময় কিছুটা সুদৃঢ় হলেও, পরবর্তীতে ভারতবিদ্বেষী প্রচার এবং জনমনে ক্ষোভ বৃদ্ধি পাওয়ায় নয়া দিল্লি পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক হয়েছে। ফলে, ভারতীয় সরকারের এই কঠিন পদক্ষেপটি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির একটি নিদর্শন হতে পারে।
তবে সবকিছু খারাপ না। ভারতের সাহায্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। বিশেষ করে, ঢাকা-জয়দেবপুর ডুয়াল লাইন প্রকল্প এবং কুলাউড়া-সাহাবাজপুর পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ভারতীয় অর্থ সহায়তা অব্যাহত থাকবে। যদিও এই প্রকল্পগুলোর জন্যও নির্দিষ্ট সময়সীমা ও অগ্রগতি নিয়ে অনেক সংশয় রয়েছে। বাংলাদেশ রেল মন্ত্রণালয় এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বিভিন্ন দেশ এবং সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করছে। তবে, প্রকল্পগুলো বন্ধ হওয়ায় দেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় ধরনের পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি, তবে সরকার পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তিত।
ভারতের রেলওয়ে কোচের রঙ: প্রতিটি রঙের পিছনে বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত কারণ
উলেখ্য, ভারতীয় সহায়তার প্রত্যাহার বাংলাদেশের রেল প্রকল্পগুলোর জন্য এক বড় ধরনের আঘাত হতে পারে, তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জটিলতা এসব সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারকে এখন অন্যান্য উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে হবে এবং রেল যোগাযোগের উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি, বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী মনোভাবের বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি, কারণ এর প্রভাব ভবিষ্যতে আরও ব্যাপক হতে পারে।