আগামী ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫-এ ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করবেন। এই বাজেটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে চলেছে ভারতের অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে মন্থর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং মূল্যবৃদ্ধির চাপের মধ্যে, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ও খরচের দিক থেকে বেশ কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন। সরকারের পক্ষ থেকে কিছু পদক্ষেপের সম্ভাবনা রয়েছে, যা সরাসরি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ওপর প্রভাব ফেলবে এবং তাঁদের স্বস্তি দেবে।
সূত্রের খবর, নতুন বাজেটে আয়করের ব্যবস্থা নিয়ে কিছু বড় পরিবর্তন আনার কথা ভাবা হচ্ছে। একটি সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত হল, বার্ষিক ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়করমুক্ত ঘোষণা করা। এর ফলে, যেসব মধ্যবিত্ত শ্রেণী বা যাঁদের বার্ষিক আয় ১০ লক্ষ টাকার কম, তারা করের চাপ থেকে মুক্তি পাবেন। বর্তমানে ৭.৭৫ লক্ষ টাকার মধ্যে আয়ভুক্ত বেতনভোগী করদাতাদের কার্যকরভাবে কোনও করের দায় নেই, তবে আয় ৭.৭৫ লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে গেলে করের হার বাড়তে থাকে। অন্য একটি প্রস্তাবনায় বলা হচ্ছে যে, যাঁদের বার্ষিক আয় ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকার মধ্যে, তাঁদের জন্য ২৫ শতাংশ ট্যাক্স স্ল্যাব চালু করা হতে পারে। বর্তমানে, ১৫ লক্ষ টাকার বেশি আয় করা ব্যক্তিরা সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ কর দেন, তবে এই নতুন পদক্ষেপটি যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে তাঁরা ২৫ শতাংশ কর দিতে বাধ্য হবেন, যা তাদের জন্য কিছুটা স্বস্তির বিষয় হতে পারে। এই কর ছাড়ের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে, সরকারের রাজস্বতে বিপুল পরিমাণ ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সরকারের মোট রাজস্ব ক্ষতি হতে পারে ৫০ হাজার কোটি থেকে ১ লক্ষ কোটি টাকা পর্যন্ত। তবে, অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপটি যদি ভারতীয় অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে সহায়ক হয় এবং ভোক্তা খরচ বৃদ্ধি পায়, তাহলে তা দীর্ঘমেয়াদে সরকারের রাজস্বের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করতে পারে।
১৮,০০০ ভারতীয় অবৈধ অভিবাসী শনাক্ত, ফেরত পাঠাতে তৎপর ট্রাম্প
প্রসঙ্গত, ভারতে বর্তমানে দুটি কর ব্যবস্থা চালু রয়েছে। পুরনো ব্যবস্থা অনুসারে, করদাতারা বাড়িভাড়া এবং বিমার প্রিমিয়ামের মতো ছাড় পেয়ে থাকেন, তবে নতুন ব্যবস্থায় এমন কোনও ছাড়ের সুযোগ নেই। ২০২০ সালে শুরু হওয়া নতুন কর ব্যবস্থায়, যদিও কর হার কিছুটা কমানো হয়েছে, তবে ছাড়ের সুযোগ না থাকার কারণে এটি সাধারণ জনগণের জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। বর্তমান সময়ে, মূল্যবৃদ্ধি ভারতীয় অর্থনীতিতে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ ক্রমশ বাড়ছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। খাদ্য ও জ্বালানির দাম বাড়ায়, সাধারণ মানুষ খরচ সামলাতে নাভিশ্বাস উঠছে। বিশেষত মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো এই সমস্যায় সবচেয়ে বেশি বিপদগ্রস্ত।
উলেখ্য, এই পরিস্থিতিতে, ১ ফেব্রুয়ারির কেন্দ্রীয় বাজেট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অনেকেই আশা করছেন যে, কেন্দ্র সরকার মধ্যবিত্তের জন্য কিছু সুষম ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, যাতে তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয় এবং জীবনযাত্রার ব্যয় কিছুটা কমে আসে। কর ব্যবস্থা ও অন্যান্য আর্থিক পদক্ষেপ নিয়ে আগাম কিছু পরিকল্পনা জানা গেলেও, আগামী বাজেটের পরেই স্পষ্ট হবে কীভাবে সরকার এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়িত করতে চলেছে। এছাড়া, মূল্যবৃদ্ধির চাপের মধ্যে, সাধারণ মানুষ আশা করছেন যে বাজেটে বিশেষ কোনও ঘোষণা আসবে যা তাদের দৈনন্দিন খরচের চাপ কমাতে সহায়ক হবে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের ২০২৫-২৬ সালের বাজেট পেশের পরই জানা যাবে, কি ধরনের নতুন পদক্ষেপ সরকার গ্রহণ করবে, আর এর ফলে কি ভারতীয় অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত হবে, এবং সাধারণ মানুষ কতটা উপকৃত হবে।