হাতের লেখা, যাকে আমরা সাধারণত কোনো ব্যক্তির সই বা স্বাক্ষর হিসেবে জানি, আসলে কেবলমাত্র একটি সাদামাটা কাগজে আঁকা অক্ষর নয়। এটি মানুষের মনের অবস্থা, শারীরিক স্বাস্থ্য এবং এমনকি তার চরিত্রের গভীরে থাকা নানা তথ্যকেও প্রকাশ করে। কলকাতা ইনস্টিটিউট অব গ্রাফোলজি (গ্রাফোলজি বা হাতের লেখার বিজ্ঞান) সম্প্রতি তাদের অষ্টাদশ বার্ষিক সভায় এমনই কিছু চমকপ্রদ তথ্য তুলে ধরলেন। মোহন বসু, সংস্থার ডিরেক্টর, এই সভায় একের পর এক উদাহরণ দিয়ে শোনালেন, কীভাবে হাতের লেখা মানুষের নানা গোপন তথ্য উন্মোচন করতে সক্ষম।
গ্রাফোলজি কেবল মানুষের মনের কথা জানায় না, শরীরের বিভিন্ন সমস্যাও এর মাধ্যমে প্রকাশ পেতে পারে। মোহন বসু সবার আগে তুলে ধরেন একটি সাত বছর পুরানো ঘটনাকে। এক ভাইপো কাকার সই নকল করে ৪০ লক্ষ টাকার চেক লিখে ব্যাংকে জমা দিয়েছিলেন। চেকের সইটি ছিল হুবহু মিল, কিন্তু ব্যাঙ্ক কর্মকর্তা সন্দেহজনক হয়ে ওঠেন এবং একটি গ্রাফোলজিস্টের সাহায্য নেওয়া হয়। ওই গ্রাফোলজিস্ট সইয়ের মাধ্যমে বুঝতে পারেন যে, কাকার সইয়ে গ্যাসট্রিকের সমস্যা রয়েছে, অথচ ভাইপোর নকল সইয়ে সে সমস্যা অনুপস্থিত। এই তথ্যের মাধ্যমে সঠিক তদন্ত শুরু হয়ে এবং ভাইপো শেষ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় শপথগ্রহণ: জানুন কখন এবং কোথায় দেখবেন
প্রসঙ্গত, গ্রাফোলজির মাধ্যমে আত্মহত্যাপ্রবণতা চিহ্নিত করা, যা মনে হতে পারে অবিশ্বাস্য, তা কিন্তু পুরোপুরি বৈজ্ঞানিক। মোহন বসু জানালেন, কারো হাতের লেখা যদি অসুস্থ বা সংকটাপন্ন মানসিক অবস্থার ইঙ্গিত দেয়, তাহলে লেখার চাপ, স্ট্রোক বা কালির গভীরতায় পরিবর্তন দেখা যায়। গ্রাফোলজিস্টরা এই পরিবর্তনগুলি ধরতে পারেন এবং তদনুযায়ী সেই ব্যক্তির মানসিক অবস্থা বা আত্মহত্যাপ্রবণতার সংকেত পেতে পারেন। গত এক বছরে, এমনই ২০ জনকে আত্মহত্যার পথ থেকে ফিরিয়ে আনা গেছে, যাদের লেখা থেকে তাদের মানসিক সংকট সম্পর্কে জানা গিয়েছিল।
উলেখ্য, গ্রাফোলজিস্টদের দক্ষতা শুধু আত্মহত্যা প্রবণতা শনাক্তকরণেই সীমাবদ্ধ নয়, তারা অপরাধ তদন্তেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। একবার একটি নামী প্রতিষ্ঠানে হাতে লেখা হুমকি চিঠি আসে। গ্রাফোলজিস্টদের সাহায্যে, চিঠির লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত শারীরিক ও চারিত্রিক বিবরণ পাওয়া যায়। এই তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ লেখককে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। এই ঘটনাটি প্রমাণ করে যে, হাতের লেখা শুধুমাত্র একটি চিহ্ন নয়, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ অপরাধ তদন্তের মাধ্যমও হতে পারে।
গ্রাফোলজিস্টরা এটাও জানান, হাতের লেখায় কিছু পরিবর্তন এনে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করা সম্ভব। সঠিক দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা শিখলে, এবং মনোযোগ দিয়ে লেখা পরিবর্তন করলে, মানুষের মনের অবস্থা এবং মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা যায়। কলকাতা ইনস্টিটিউট অব গ্রাফোলজির এই বার্ষিক সভা থেকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে, তা হলো গ্রাফোলজিস্টদের চাহিদা বর্তমানে দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যেমন অপরাধ তদন্ত, মানসিক স্বাস্থ্য, এবং সাধারণ মানুষের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে এই বিজ্ঞানের প্রয়োগ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।তাহলে, হাতের লেখা কেবলমাত্র একটি দৈনন্দিন কার্যকলাপ নয়, এটি একটি জটিল বিজ্ঞান। মন, শরীর, এবং চরিত্রের নানা সংকেত হাতের লেখার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। গ্রাফোলজির মাধ্যমে মানুষের মনের গভীরতর কথা জানা সম্ভব, এবং এটি অপরাধ তদন্ত, মানসিক স্বাস্থ্য এবং ব্যক্তিগত উন্নতির ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর একটি পদ্ধতি হয়ে উঠেছে।