গত সোমবার থেকে শুরু হয়েছে ঐতিহাসিক মহাকুম্ভ মেলা, যা চলবে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ভারতের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব মহাকুম্ভ মেলা এই বছর ৪৫ কোটিরও বেশি ভক্তের সমাগম হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এবারের মেলা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে জাঁকজমকপূর্ণভাবে, যেখানে ভক্তরা গঙ্গা, যমুনা এবং পবিত্র সরস্বতী নদীর সঙ্গমস্থলে পুণ্যস্নান করতে আসছেন। ১২ বছর অন্তর এই মেলা আয়োজন করা হয়, যা এই বছরের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।
পূর্বে যাকে ইলাহাবাদ বলা হত, বর্তমানে তা 'প্রয়াগরাজ' নাম ধারণ করেছে। মহাকুম্ভ উপলক্ষে উত্তরপ্রদেশের এই শহর নতুনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে ভক্তরা উপভোগ করতে পারেন ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক আবহ। একদিকে যেমন মেলা তীর্থযাত্রীদের জন্য তীর্থস্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে, তেমনি অপরদিকে বিশ্বব্যাপী ধর্মানুরাগীদের জন্য এটি এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্মিলনস্থল। মহাকুম্ভ মেলায় আসা এক বিশেষ ব্যক্তিত্ব হলেন 'মাসকুলার বাবা' বা 'পেশিবহুল বাবা'। তাঁর আসল নাম বাবা আত্মাপ্রেম গিরি হলেও, 'মাসকুলার বাবা' হিসেবে তিনি পরিচিত। তিনি আসলে রাশিয়ার বাসিন্দা এবং বর্তমানে নেপালে থাকেন। যদিও তার বাহ্যিক দৃশ্য অত্যন্ত শক্তিশালী, তবে তাঁর মুখে থাকে এক নিরীহ হাসি, যা তাঁকে ভক্তদের কাছে এক অনন্য আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
ইসরোর মহাকাশে স্পেস ডকিংয়ের সাফল্য: ভারতের নতুন কীর্তি
উলেখ্য, বাবা আত্মাপ্রেম গিরি প্রায় সাত ফুট লম্বা এবং সুগঠিত শরীরের অধিকারী। তিনি শরীরচর্চার প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী, এবং দিনব্যাপী তা চালিয়ে যান। তাঁর সুঠাম দেহ এবং নিরলসভাবে শরীরচর্চার প্রতি ভালোবাসা তাকে 'মাসকুলার বাবা' হিসেবে বিশেষ পরিচিতি দিয়েছে। এমনকি তাঁর ভক্তদের একাংশ তাঁকে ভগবান পরশুরামের আধুনিক অবতার বলে দাবি করেন। মাসকুলার বাবা তিন দশক আগে শিক্ষকতা ছেড়ে আধ্যাত্মিকতার পথে পা বাড়ান। তিনি আধ্যাত্মিক গুরু 'পাইলট বাবা' ওরফে সোমনাথ গিরি ওরফে কপিল সিংহের শিষ্য। প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি জুনা আখড়ার সাথে যুক্ত আছেন এবং সাধু জীবনযাপন করছেন।
প্রসঙ্গত, মহাকুম্ভে আরেকজন সন্ন্যাসীও ভক্তদের নজর কাড়ছেন, তিনি হলেন 'আইআইটি বাবা', যাঁর আসল নাম অভয় সিংহ। অভয় সিংহ ভারতীয় প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইআইটি বম্বে থেকে 'এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং' বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। এক সময় তিনি পদার্থবিদ্যার শিক্ষক ছিলেন এবং ডিজাইনিংয়ের কাজও করতেন। কিন্তু একসময় নিজের আধ্যাত্মিক জীবনের খোঁজে তিনি সব কিছু ছেড়ে দিয়ে সাধু হয়ে ওঠেন। বর্তমানে তিনি 'মাসানি গোরখ' নামে পরিচিত এবং মহাকুম্ভে তাঁর উপস্থিতি বিশেষভাবে আলোচিত। মহাকুম্ভ মেলা শুধুমাত্র ধর্মীয় তীর্থযাত্রীদের জন্য নয়, এটি এক অপূর্ব আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা। এখানে উপস্থিত সন্ন্যাসী, সাধু এবং আধ্যাত্মিক গুরুদের মধ্যে বিভিন্ন মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনার ক্ষমতা রয়েছে। তাঁদের উপস্থিতি এবং শিক্ষায় ভক্তরা নতুন জীবনপদ্ধতি ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের প্রতি উদ্বুদ্ধ হন। এবারের মহাকুম্ভ মেলা, যেখানে হাজারো সাধু, সন্ন্যাসী, ভক্ত ও দর্শনার্থী একত্রিত হচ্ছেন, তা বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসবগুলির মধ্যে অন্যতম। ধর্মীয় আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে, এখানে অনুপ্রাণিত হতে পারেন হাজার হাজার মানুষ।