আগামীকাল, ১৮ জানুয়ারি, জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট (JDF) তাদের একাধিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। প্রথমত, শুক্রবার, ১৮ জানুয়ারি, সকাল ৮টা থেকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি, তারা শিয়ালদহ আদালত চত্বরে একটি মহা সমাবেশও আয়োজন করেছে, যেখানে দুপুর ১টা ৩০ মিনিট থেকে জমায়েত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিকালে বিধাননগর কমিশনারেটের সামনেও বিক্ষোভ সমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিবাদ মূলত মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় সাসপেন্ড হওয়া ১২ জন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের পর থেকে সংগঠিত হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারদের অভিযোগ, সরকার চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করছে। তারা মনে করছেন, আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার পর থেকেই সরকার ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অনৈতিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, বিশেষত বিষ স্যালাইন বিতরণ নিয়ে সরকার কোনো উচ্চবাচ্য করছে না। জানা গেছে, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে একটি প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় ১২ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ রয়েছে। এই ঘটনার তদন্তে মুখ্যসচিব জানান, সার্জারির সময়ে চিকিৎসকদের দায়িত্ব পালনে গাফিলতি ছিল। বিশেষত, আরএমও এবং কল ডিউটির চিকিৎসকরা অপারেশন থিয়েটারে যাননি, এবং সিনিয়র চিকিৎসকদের পরিবর্তে পিজিটি ডাক্তাররা অ্যানাস্থেসিয়া দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণভাবে ভুল ছিল। এমনকি রোগীর পরিবারের সদস্যদের দিয়ে মুচলেখা লেখানো হয়েছিল, যা অবিশ্বাস্য এবং অগ্রহণযোগ্য বলে অভিহিত করা হয়েছে।
স্যালাইন কাণ্ডে ১২ জনকে সাসপেন্ড করল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “যাঁরা সেদিন দায়িত্বে ছিলেন, তাদের জন্য এই ঘটনা ঘটেছে, তাদের আর দায়িত্বে রাখা যাবে না। অন্য রোগীর জীবনও তাদের হাতে ঝুঁকিতে পড়তে পারে, তাই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।” তিনি আরো বলেন, “চিকিৎসকদের প্রতি সহানুভূতির সাথে মানুষের দিকটাও দেখতে হবে, এবং যেখানে অন্যায় ঘটে সেখানে অবশ্যই তদন্তের পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এদিকে, জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন তাদের কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। তাদের দাবি, সরকার চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত না করে সরাসরি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে, যা পুরো চিকিৎসক সমাজের প্রতি এক ধরনের আক্রমণ।
প্রসঙ্গত, জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন বর্তমানে রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থার গুণগত মানের উপরও এক বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করেছে। তাদের দাবি, সরকার যদি এমন সিদ্ধান্ত নিতে থাকে তবে চিকিৎসা সেবা দিতে আরও কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, যা রোগীদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে এবং আন্দোলনকারীদের দাবি, তাদের পক্ষ থেকে একটি ন্যায্য এবং স্বচ্ছ তদন্ত হওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে এমন কোনো গাফিলতি না ঘটে এবং চিকিৎসকদের প্রতি সরকারের মনোভাব ইতিবাচক থাকে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় সাসপেন্ড হওয়া ১২ জন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ এনে জুনিয়র ডাক্তাররা আন্দোলন শুরু করেছে। তারা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলছে, এবং আগামী ১৮ জানুয়ারি শিয়ালদহ আদালত চত্বরে মহা সমাবেশ এবং মেদিনীপুর মেডিক্যালে কর্মবিরতির ঘোষণা করেছে।