বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন মহাম্মদ ইউনুস সরকার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের মধ্যে শেখ হাসিনা ছাড়াও আরও ৯৬ জনের পাসপোর্ট বাতিল হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২২ জনের বিরুদ্ধে মানুষকে গুম করার অভিযোগ রয়েছে। ৭৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এই ঘোষণা মঙ্গলবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপ-প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার এক বিবৃতিতে দিয়েছেন। এদের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধে যুক্ত থাকার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে খুন, খুনের ষড়যন্ত্র, গুম খুন এবং অপহরণের মতো অপরাধের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার দাবি করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় নাম হিসেবে উঠে এসেছে শেখ হাসিনার নাম। ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুম ও খুনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
উলেখ্য, শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকা থেকে ভারতে চলে আসেন। এরপরই বাংলাদেশ সরকার তার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল ঘোষণা করে। শেখ হাসিনাকে বারে বারে ফেরত চাইছে বাংলাদেশ এবং তাকে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। পাসপোর্টের বৈধতার সময়সীমা বাতিল হওয়ার পর সেটি স্থায়ীভাবে অকার্যকর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রকের ইমিগ্রেশন সেল এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়। তবে, বাংলাদেশের সরকার দাবি করেছে যে, তাদের এই সিদ্ধান্ত ভারত সরকারকে জানানো হয়েছে। ভারত যদি অনুমতি দেয় তাহলে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে ভারতে গিয়ে শেখ হাসিনাকে জেরা করতে রাজি আছে এবং একথাও বলেছে যে শেখ হাসিনাকে ফেরত না দিলেও ভারতের সাথে আমরা সম্পর্ক খারাপ করব না।
ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত সোমবার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গুম ও খুনের অভিযোগে দ্বিতীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান পিএস আহমেদ তদন্তের জন্য পুলিশের কাছে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রিপোর্ট পেশ করতে বলেছেন এবং শেখ হাসিনাকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গণ আন্দোলনে নিহতদের তালিকা তৈরি করছে। প্রথম ধাপে ৮২৬ জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে অভিযোগ উঠেছে যে, গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে বহু মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের অগস্ট পর্যন্ত নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার তদন্তের জন্য একটি কমিশনও তৈরি করেছে ইউনূস সরকার। কাউকে কাউকে আট বছর পর্যন্ত বন্দি করে রাখা হয়েছিল বলে দাবি রিপোর্টে। কোনও কোনও বন্দিকে খুন করে দেহ নদীতে ফেলা হয়েছিল। কমিশনের দাবি, তারা ১,৬৭৬টি নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ পেয়েছে। ৭৫৮ জনের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, এটি শুধু বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিল এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও জনবিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্তের পিছনে রাজনৈতিক চক্রান্ত থাকতে পারে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। বিশ্ববাসীর নজর রয়েছে এই ঘটনায়, কারণ এটি বাংলাদেশের আইন ও রাজনীতির দিকে নতুন আলো ফেলতে পারে। আশা করা যাচ্ছে যে, আগামী দিনগুলোতে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে এবং তা আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে গভীর প্রভাব ফেলবে।