ভারতের গঙ্গা ও যমুনা নদীর সঙ্গমস্থলে আগামী ১৩ জানুয়ারি থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্বব্যাপী পরিচিত এবং বৃহত্তম ধর্মীয় মেলা, মহাকুম্ভ। প্রতি ১২ বছর পরপর অনুষ্ঠিত হওয়া এই মহাকুম্ভ মেলা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান। ৪৫ দিন ধরে চলা এই মহাকুম্ভ হিন্দুদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবার মহাকুম্ভে ভারত-বিদেশের ৪০ কোটিরও বেশি মানুষ অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এতে অংশগ্রহণকারীরা বিশ্বাস করেন যে, এই মেলা ও স্নান তাদের পাপ মুক্তি এবং মোক্ষ লাভের জন্য সহায়ক হতে পারে।
উলেখ্য, মহাকুম্ভ মেলা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং বিশাল জনসমাগমের স্থান। হিন্দু ধর্মে এটি এক বিশেষ ধর্মীয় আচার হিসেবে পরিচিত, যেখানে লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী ও ভক্তরা পবিত্র গঙ্গা, যমুনা, এবং ক্ষিপ্রা, গোদাবরী এবং সঙ্গমে নদীতে স্নান করেন। এই সময়ে মোট ছয়টি রাজকীয় স্নানের আয়োজন করা হয়, যা হাজার হাজার ভক্তের জন্য এক বিশাল আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা। মহাকুম্ভ মূলত এক বিশেষ সময়ে, গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান অনুসারে অনুষ্ঠিত হয়, যা পণ্ডিতরা এবং আখড়ার প্রধানরা নির্ধারণ করেন। এই সময়ে সূর্য, বৃহস্পতি এবং অন্যান্য প্রধান গ্রহের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত ১২ বছরে এই মেলা একমাত্র প্রয়াগরাজে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সর্বশেষ মহাকুম্ভ মেলা ২০১৩ সালে সেখানে আয়োজিত হয়েছিল।
২০ বছর পরে স্পেন থেকে ভারতে এসেছেন জন্মদাত্রী মায়ের খোঁজে
কুম্ভ মেলা চারটি প্রধান প্রকারের হয়ে থাকে:
১. কুম্ভ মেলাঃ এই মেলা প্রতি ১২ বছর পর অনুষ্ঠিত হয় এবং এটি সাধারণত প্রয়াগরাজ, হরিদ্বার, নাসিক এবং উজ্জয়ন শহরে আয়োজিত হয়।
২. অর্ধ কুম্ভ মেলাঃ এটি প্রতি ছয় বছর পর অনুষ্ঠিত হয়, তবে কেবল প্রয়াগরাজ ও হরিদ্বারে।
৩. সম্পূর্ণ কুম্ভ মেলাঃ ১২ বছর পরের কুম্ভ মেলাকে পূর্ণ কুম্ভ বলা হয় এবং পূর্ণ কুম্ভ শুধুমাত্র প্রয়াগরাজের সঙ্গম তীরে অনুষ্ঠিত হয়। এইভাবে, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে প্রয়াগরাজে অনুষ্ঠিত মেলাটি কেবল কুম্ভ নয়, একটি সম্পূর্ণ কুম্ভও। ২০১৩ সালে প্রয়াগরাজে শেষ কুম্ভ মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। প্রয়াগরাজে যে কুম্ভ হয় তা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়।
৪. মহা কুম্ভ মেলাঃ মহাকুম্ভ ২০২৫ সালে প্রয়াগরাজে অনুষ্ঠিত হবে। এটি ১৩ জানুয়ারি শুরু হবে এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। শেষবার ২০১৩ সালে প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভের আয়োজন করা হয়েছিল। ১২ বছর পর, প্রয়াগরাজ আবার কুম্ভ মেলার আয়োজন করছে।
প্রসঙ্গত, মহাকুম্ভের ইতিহাস বহু পুরনো এবং এটি হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীগুলির সাথে গভীরভাবে যুক্ত। কথিত আছে, সমুদ্র মন্থনের সময় দেবতারা অমৃত পান করতে যুদ্ধ করেছিলেন এবং এর ফলে কুম্ভ মেলা চালু হয়। ১২ দিন ধরে চলা এই যুদ্ধ মানুষের সময়ের হিসেবে ১২ বছর সমান, তাই কুম্ভ মেলা প্রতি ১২ বছর পর অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া, কুম্ভ মেলা শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি এক বিশাল সাংস্কৃতিক এবং আধ্যাত্মিক মিলনস্থল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার সন্ন্যাসী, সাধু, এবং তীর্থযাত্রী প্রয়াগরাজে আগমন করেন। জ্যোতিষী এবং আখড়ার প্রধানরা একত্রিত হয় এবং কোথায় কুম্ভ মেলার আয়োজন করা হবে তা ঠিক করে। সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য তারা হিন্দু জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রধান গ্রহ - বৃহস্পতি এবং সূর্যের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করে। বৃহস্পতি অর্থাৎ গুরু এবং সূর্য উভয়ই হিন্দু জ্যোতিষশাস্ত্রে প্রধান গ্রহ। অতএব, শুধুমাত্র এই গণনার ভিত্তিতে স্থান নির্বাচন করা হয়।
মহাকুম্ভ মেলা ২০২৫ প্রয়াগরাজে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যা দেশের অন্যতম বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত। এটি শুধু ধর্মীয় মিলনস্থল নয়, বরং একটি বিশাল সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক সম্মেলন, যেখানে সকল ভক্তরা একত্রিত হয়ে পবিত্র স্নানে অংশ নেন। ভারতের তীর্থস্থানগুলির মধ্যে এটি একটি অমূল্য রত্ন হিসেবে পরিচিত এবং এই মেলা হিন্দু ধর্মের চিরন্তন ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখে।