গত ৩ ফেব্রুয়ারি, মোদি সরকারের তরফে একটি গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে, যা সঙ্গম অঞ্চলের নদীজলে বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি সম্পর্কে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। এই রিপোর্টটি মূলত জলদূষণের মারাত্মক পরিণতি এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। একদিকে, প্রতিবেদনটির মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থার সংকটের বিষয়টি উঠে এসেছে, অন্যদিকে, এর ফলে সৃষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
বাজারে আসতে চলেছে মেয়েদের ক্যান্সার ভ্যাকসিন
রিপোর্টে বলা হয়েছে, সঙ্গমের নদীর জলে মলমূত্রের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে, যা জৈব পদার্থের সাথে মিশে জলকে আরও দূষিত করছে। এর ফলে জল থেকে অক্সিজেনের ক্ষয় হচ্ছে, যা বাস্তুতন্ত্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশেষ করে, ১২ এবং ১৩ জানুয়ারি নেওয়া জল নমুনাগুলির পরীক্ষায় দেখা গেছে, বায়োকেমিক্যাল অক্সিজেন ডিম্যান্ড (BOD)-এর ভিত্তিতে এটি স্নানের জন্য অনুপযুক্ত। এছাড়া, ফিকাল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি বেড়ে যাওয়ার কারণে এটি একেবারেই নিরাপদ নয়। ফিকাল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া সাধারণত মানুষের মল থেকে উৎপন্ন হয় এবং এটি সরাসরি শরীরে অসুস্থতা সৃষ্টি করে না, তবে এটি জলবাহিত রোগজীবাণুর উপস্থিতির সংকেত দেয়। একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, এই ব্যাকটেরিয়া জলদূষণের অন্যতম কারণ এবং এটি ক্ষতিকর জীবাণু যেমন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং প্রোটোজোয়ার উপস্থিতি নির্দেশ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দূষিত জল খাওয়া বা তাতে স্নান করা একেবারেই ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ এতে ডায়রিয়া, বমি, টাইফয়েড, চর্মরোগ এবং কলেরা মতো গুরুতর রোগের ঝুঁকি থাকে। স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালের ডিপার্টমেন্ট অফ ইন্টারনাল মেডিসিনের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ড. অতুল কাকর এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তিনি জানিয়েছেন যে, স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা যথেষ্ট নয় এবং এটি জলবাহিত রোগের বিস্তার ঘটাচ্ছে। দূষিত জল খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করা ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস থেকে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া, এটি জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উলেখ্য, এই রিপোর্টের পর কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রণালয় উত্তরপ্রদেশের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে তলব করেছে এবং প্রশাসনকে দূষণ নিয়ন্ত্রণে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। পরিবেশ আদালতের নির্দেশ অনুসারে, জলদূষণ রোধে এবং সঠিক স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি পরিষ্কারভাবে প্রমাণ করছে যে, নদীজলে মলমূত্রের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত, এই জল স্নান এবং খাওয়ার জন্য নিরাপদ নয়। সঠিক স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক, যাতে মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকে এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।