২০২৪-২৫ অর্থবছরের রাজ্য বাজেটে গ্রামোন্নয়ন এবং পঞ্চায়েত খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দের ঘোষণা করেছেন রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। এটি ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। প্রত্যাশিতভাবেই এই বাজেটে গ্রামীণ উন্নয়নকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এবং বরাদ্দের ঘোষণা করা হয়েছে, যা রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণও।
গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য বাজেটে ৪৪ হাজার ১৩৯ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যা কোনো অন্যান্য খাতে বরাদ্দের তুলনায় সর্বোচ্চ। এই সিদ্ধান্তের পিছনে অবশ্য রয়েছে রাজ্যের ২৯৪ আসনের বিধানসভায় গ্রামাঞ্চলের আসনের প্রভাব। ১৭০ থেকে ১৮০টি আসন সাধারণত নির্বাচনে "নির্ণায়ক" হয়ে দাঁড়ায়, ফলে শাসকদল গ্রামীণ জনগণের মনোভাবের প্রতি নজর রেখেই এই বরাদ্দ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পথশ্রী প্রকল্প:রাজ্যের গ্রামীণ সড়ক নির্মাণের জন্য এবার আরও দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। মমতা সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে, যাতে গ্রামের সঙ্গে শহরের সংযোগ বৃদ্ধি পায় এবং স্থানীয় অর্থনীতি শক্তিশালী হয়।
বাংলার বাড়ি প্রকল্প: রাজ্য সরকারের 'বাংলার বাড়ি' প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটেছে, এই প্রকল্পের জন্য ৯,৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর আওতায় ১২ লক্ষ পরিবারকে পাকাবাড়ি নির্মাণের জন্য টাকা দেওয়া হয়েছে, এবং আগামী অর্থবর্ষে আরও ১৬ লক্ষ পরিবার এর সুবিধা পাবে। কৃষি ও অন্যান্য খাতে বরাদ্দ: কৃষিজ পণ্যের বিপণন বিভাগে ৪২৬ কোটি, কৃষিবিভাগে ১০ হাজার কোটি, এবং প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন বিভাগে ১,২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের অর্থনীতি বৃদ্ধি এবং কৃষির উন্নয়নে এই বরাদ্দ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নদী বন্ধন প্রকল্প: প্রতি বর্ষায় নদী ভাঙনের কারণে গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তারই সমাধানে ‘নদী বন্ধন’ নামে একটি নতুন প্রকল্পের জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
রাজ্য বাজেটে মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকীকরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রীয় সরকার ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার নিজের পকেট থেকে এই টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে সাড়ে ২৪ লক্ষ শ্রমিক ওই টাকা পাবে। এছাড়া, 'কর্মশ্রী প্রকল্প' চালু হয়েছে, যার মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের শ্রমিকদের জন্য ৫০ দিনের কর্মসংস্থান সরবরাহ করা হবে।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে মমতা সরকারের জনপ্রিয়তা এখনও অটুট। 'আরজি কর' হাসপাতালের মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর শহরে সরকারবিরোধী আন্দোলন হলেও গ্রামে তার প্রভাব কম ছিল। এই পরিস্থিতিতে শাসক দল মনে করছে, গ্রামাঞ্চলের ভোট এখনও তাদের পাশে রয়েছে এবং বাজেটে গ্রামীণ উন্নয়নের দিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। বাজেট পেশের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “গ্রামের মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে এবং শহরের অর্থনীতিও পুষ্ট হবে। আমরা শহর-গ্রামের মধ্যে মেলবন্ধন করতে চাই।” তবে বাজেটে গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ অর্থের পরিমাণই রাজনৈতিক সংকেত স্পষ্ট করে দেয়।২০২৪-২৫ রাজ্য বাজেটে গ্রামীণ উন্নয়নে বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে তৃণমূল সরকার গ্রামাঞ্চলের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। নির্বাচনী অঙ্কের দিকে লক্ষ্য রেখে, এই বাজেটের মাধ্যমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের লক্ষ্য গ্রামীণ জনগণের মন জয় করা এবং ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে শক্তিশালী অবস্থানে রাখা।