বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিনের বইয়ের ওপর হামলা চালিয়েছে একদল ‘বিদ্রোহী ছাত্র’ সোমবার ঢাকার অমর একুশে বইমেলা চত্বরে। ঘটনাটি ঘটে যখন ‘সব্যসাচী প্রকাশনী’ তাদের স্টলে তসলিমার বই বিক্রি করছিল। অভিযোগ উঠেছে, ওই বইগুলোর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করে হামলাকারীরা। প্রকাশক তাদের অগত্যা বই সরাতে অস্বীকৃতি জানালে, হামলাকারীরা স্টলটি ভাঙচুর করতে শুরু করে। ঘটনাটি ভাইরাল হয়ে গেলে, তসলিমা নাসরিন নিজেই এক্স হ্যান্ডলে এর তীব্র নিন্দা করেন এবং এই হামলাকে ‘জেহাদি কার্যকলাপ’ হিসেবে উল্লেখ করে ইউনুস সরকারের সমালোচনা করেন।
প্যারিসে মোদী-মাকরঁ এর বন্ধুত্বপূর্ণ আলিঙ্গন, ট্রাম্পের ডেপুটির সঙ্গে আলোচনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী
প্রসঙ্গত, হামলার ঘটনায় তসলিমা নাসরিনের বইগুলোর বিক্রি এবং স্টলে উপস্থিতি নিয়ে এক দফা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। হামলাকারীরা নিজেদের ‘বিদ্রোহী ছাত্র’ বলে পরিচয় দিয়ে এই আক্রমণ চালায় এবং প্রকাশকের কাছে দাবি জানায় যে তসলিমা নাসরিনের বই বইমেলা থেকে সরিয়ে নিতে হবে। তবে প্রকাশক কোনো অবস্থাতেই তাদের দাবি মেনে নেয়নি। হামলার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে, তবে তার আগেই যথেষ্ট ক্ষতি হয়ে যায়। এদিকে, ইউনুস সরকার ঘটনার পর মঙ্গলবার সকালে এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, এ ধরনের হামলা বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও উদারতার পরিপন্থী। তিনি আরও বলেন, "এমন হামলা দেশের ভাবাবেগের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। বইমেলা লেখক-পাঠকের সাক্ষাতের স্থান, যেখানে এমন সহিংসতা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।" তিনি দেশের পুলিশ প্রশাসনকে তদন্তের নির্দেশ দিয়ে বলেন, হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া বইমেলার নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে বলে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে এই ঘটনায় অনেকের মত, ইউনুস সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতি নিছকই লোকদেখানো পদক্ষেপ বলে মনে হচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ না থাকলে এই ধরনের হামলা এবং সহিংসতার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। এছাড়া, বইমেলা চত্বরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রছাত্রীদের উদ্যোগে এক অদ্ভুত দৃশ্যও দেখা যায়, যেখানে তারা একটি আবর্জনা ফেলার পাত্রের নাম দিয়েছেন ‘হাসিনাবিন’। সমাজের নির্দিষ্ট অংশের মতে, এই ধরনের অশ্লীল প্রতিবাদ একটি সুরুচিসম্পন্ন সমাজের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
উল্লেখযোগ্য যে, বইমেলার চিত্রের এই পরিবর্তনটি দেশে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার একটি প্রতিফলন। তসলিমা নাসরিনের ওপর হামলা, ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদ এবং বইমেলার নিরাপত্তা নিয়ে উত্তেজনা পুরো বাংলাদেশে আলোচনা সৃষ্টি করেছে। এভাবে বইমেলায় সহিংসতার ঘটনাটি দেশের উদারতা এবং সংস্কৃতির ওপর এক বড় আঘাত হতে পারে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসলে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব দেশের সংস্কৃতি ও সমাজে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।