কলকাতা বইমেলা, যেখানে বইপ্রেমীরা তাদের ভালোবাসা এবং আবেগকে একত্রিত করে, সেখানে কেউ কেউ শুধু পাঠক নন, তারা এক অভূতপূর্ব সংগ্রাহকও। তেমনই একজন হচ্ছেন চাকদহের শিক্ষক দেবব্রত চট্টোপাধ্যায়। বইয়ের প্রতি তার ভালোবাসা শুধু পাঠকের চেয়ে অনেক বেশি। প্রায় দু’দশক ধরে বইয়ের প্রতি তার এই গভীর প্রেম অটুট রয়ে গেছে। এরই মধ্যে, তিনি এক অনন্য সংগ্রাহক হয়ে উঠেছেন।
উলেখ্য, দেবব্রত চট্টোপাধ্যায়, যিনি প্রতি বছর কলকাতা বইমেলায় অংশ নেন, এবারের বইমেলায় প্রায় চার লক্ষ টাকার বই কিনেছেন। তার পূর্ববর্তী রেকর্ড ছিল সাড়ে তিন লক্ষ টাকার বই। তবে এবার, সেই রেকর্ড নিজেই ভেঙে দিয়েছেন। ১৯৯৯ সাল থেকে একাই কলকাতা বইমেলায় আসা দেবব্রতবাবু প্রতিবারই নতুন নতুন বই সংগ্রহের পাশাপাশি, বইয়ের প্রতি তার ভালোবাসার এক নতুন মাপকাঠি তৈরি করেছেন। বাবার সঙ্গে ১৯৯৪ সালে প্রথম কলকাতা বইমেলায় আসার পর দেবব্রতবাবুর বই সংগ্রহের দিকটি ক্রমেই আরও বড় হতে থাকে। বর্তমানে তার ব্যক্তিগত সংগ্রহে প্রায় ১৪ হাজারের বেশি বই রয়েছে। এবং এই বইগুলো শুধু বাড়িতেই নয়, তিনি রানাঘাটে একটি ফ্ল্যাট কিনে সেখানে আরও ২ হাজার বই রেখেছেন। তার বাড়ি এখন এক বিশাল পাঠাগারে পরিণত হয়েছে।
আজ থেকে শুরু হচ্ছে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা
দেবব্রতবাবুর পরিবারও বইপ্রেমী। বাড়িতে তার বাবা, মা, স্ত্রী এবং সন্তান সবাই বই পড়তে ভালোবাসেন। তবে, একসময় তার বাড়িতে বই রাখার জায়গা ছিল না। তাই, বই রাখার জন্য তিনি নতুন একটি লাইব্রেরি তৈরির পরিকল্পনা করেছেন এবং এজন্য জমিও কিনেছেন। দেবব্রতবাবু বলেন, “আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে দুই হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। তাদের মাধ্যমেই আমি এত টাকার বই কিনতে সক্ষম হই।” তার এই প্রাচীন বই সংগ্রহের দিকে অনেকেই নজর দিয়েছেন, এবং দেবব্রতবাবুর সংগ্রহের প্রতি তাঁদের শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে। পারুই বইয়ের কর্ণধার পার্থ সাহা বলেন, “দেবব্রতবাবুর মতো বইপ্রেমী খুব কমই দেখা যায়। উনি আমাদের স্টলে এসেও প্রচুর বই কিনেছেন। তার মতো মানুষ বইমেলার এক অমূল্য সম্পদ।”
আসলে, বইয়ের প্রতি দেবব্রত চট্টোপাধ্যায়ের এই অটুট ভালোবাসা শুধুমাত্র একজন পাঠকের আবেগ নয়, বরং এটি সারা বিশ্বের বইপ্রেমীদের জন্য এক প্রেরণা। তাঁর সংগ্রহ আজ শুধু এক শিক্ষক নয়, একজন অসাধারণ বইপ্রেমীর জীবনযাত্রার অঙ্গ হয়ে উঠেছে। তাঁর ভবিষ্যতের পরিকল্পনাও বইয়ের প্রতি তার অদম্য ভালোবাসাকে আরও বিস্তৃত করবে, এবং পাঠকদের জন্য একটি নতুন জানালা খুলে দেবে।