ভারত ও চিনের মধ্যে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত বিরোধ এবং করোনা অতিমারীর কারণে বন্ধ থাকা কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রা অবশেষে ২০২৫ সালে পুনরায় চালু হতে যাচ্ছে। বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি এবং চিনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের মধ্যে সোমবার বৈঠকে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়।
বৈঠক শেষে, ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের এক বিবৃতিতে বলা হয়, "ভারত এবং চিন উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে যে ২০২৫ সালের গরমকালে কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রা পুনরায় শুরু হবে। তবে, কীভাবে এই যাত্রা পরিচালনা করা হবে সে বিষয়ে এখনো আলোচনা চলমান রয়েছে।" এছাড়া, জলবিদ্যুৎ সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান এবং আন্তঃসীমান্ত নদী সম্পর্কিত অন্যান্য সহযোগিতা পুনরায় শুরু করার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের বৈঠকও হবে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, "এই উদ্যোগের মাধ্যমে, ভারত এবং চিন উভয় পক্ষ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপন করবে। এছাড়া, একে অন্যের প্রতি পারস্পরিক আস্থা এবং সম্পর্কের উন্নতির জন্য দ্বিপাক্ষিক প্রচেষ্টা আরও জোরদার করার লক্ষ্যে কয়েকটি স্মারক কার্যক্রম আয়োজন করবে।"
প্রতি বছর, জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ভারতীয় পুণ্যার্থীরা কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রা করেন। প্রায় কয়েক হাজার পুণ্যার্থী এই যাত্রায় অংশগ্রহণ করেন, যা সাধারণত নাথু লা বা লিপুলেখ পাসের মাধ্যমে তিব্বতে প্রবেশ করে। সেখানে, চিনা প্রশাসন পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং কাঠিন্যপূর্ণ পরিবেশের মধ্য দিয়ে তাদের কৈলাস পর্যন্ত পৌঁছায়। কিন্তু ২০২০ সালে কোভিড অতিমারী ছড়িয়ে পড়ার পর এই যাত্রা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর গালওয়ান সংঘাতের ফলে ভারত-চিন সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছায়, যার কারণে ২০২৩ সাল পর্যন্ত কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রা বন্ধ ছিল। তবে, ২০২৩ সালের শেষে চিনের পক্ষ থেকে একাধিক কড়া বিধিনিষেধের মধ্যে এই যাত্রা পুনরায় চালু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
ভারতে সমস্ত ধরণের গাড়ির জন্য থার্ড-পার্টি ইন্স্যুরেন্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে যাত্রার পুনরায় শুরুর পর, যাত্রার খরচ অনেকটাই বেড়ে যায়। এতে অনেক পুণ্যার্থী নতুন শর্তাবলী ও খরচের কারণে যাত্রায় অংশ নিতে আর আগ্রহী হননি। তবে, ২০২৫ সালে যাত্রা পুনরায় চালু হলে, নতুন পরিবহন ব্যবস্থা এবং আরও উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে এই সমস্যাগুলি সমাধান করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২৫ সালে যখন ভারত এবং চিনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫ বছর পূর্ণ হবে, তখন এটি দুই দেশের সম্পর্কের এক নতুন দিগন্ত সূচনা করবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে দুই দেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা গড়ে ওঠার পাশাপাশি, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতিতে অবদান রাখবে।
বিশ্বস্ত সূত্রের মতে, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ভারত-চিন সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে এবং ভবিষ্যতে এই দুই দেশের মধ্যে আরও সহযোগিতা সম্ভব হবে, বিশেষত সীমান্ত, জলবিদ্যুৎ এবং পরিবহন সংক্রান্ত বিষয়গুলিতে। এমনকি, ২০২৫ সালে আশা করা যাচ্ছে, ভারত ও চিন একযোগে এই মহৎ উদ্যোগের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি এবং সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার জন্য এক নতুন পথ অনুসরণ করবে।