ঢাকার জনজীবন আবারও অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে, ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে রাজধানী জুড়ে তীব্র অশান্তি ছড়িয়েছে। গত রাত্রিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছিল, যার প্রভাব পড়েছে গোটা শহরের স্বাভাবিক কার্যকলাপে। সাতটি কলেজের ছাত্রদের ডাকা হরতালে ঢাকা শহরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে যান চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে এবং জনজীবন একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকায় পুলিশ, বিজিবি এবং সেনার যৌথ বাহিনী অবস্থান নিয়েছে, এবং শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে হলে পরিচয়পত্র দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় ক্যাম্পাস বেশ ফাঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং সহ-উপাচার্যদের বাসভবন ঘিরে রয়েছে বিজিবির কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সোমবারের পরীক্ষাগুলি বাতিল করা হয়েছে, কারণ পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে শুরু করেছিল। গভীর রাতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তীব্র ক্ষোভের মুখে এলাকা ত্যাগ করতে বাধ্য হন। এক পর্যায়ে, তাঁর গাড়ি ধাওয়া করে ছাত্ররা, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে।
১০০ ঘণ্টার ভোগান্তির পর বালি ব্রিজে চালু ট্রেন-যান চলাচল
উলেখ্য, গত রবিবার রাত থেকে এ পরিস্থিতির সূত্রপাত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা সাত কলেজের ছাত্ররা দীর্ঘদিন ধরে স্বশাসনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। তাদের অভিযোগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকায় তাদের শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে। রবিবার সন্ধ্যায়, সাত কলেজের কয়েকশো শিক্ষার্থী পাঁচ দফা দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য মামুন আহমেদের কাছে স্মারকলিপি দিতে গেলে, তিনি তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এর প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে-বাইরে কলেজের ছাত্ররা অবরোধ করে এবং হোস্টেল থেকে বেরিয়ে এসে তাদের ধাওয়া করে। এর ফলে, একে একে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ বেঁধে যায়, যা রাত তিনটা পর্যন্ত চলে। ছাত্ররা পুলিশ ও বিজিবির সদস্যদের বিরুদ্ধে ইট-পাথর ছুঁড়ে মারলে, পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল এবং সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।
সাত কলেজের ছাত্রদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—স্বশাসন না দেওয়া পর্যন্ত কলেজে ভর্তি কোটা ব্যবস্থা বাতিল করা, ক্লাসে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না, ভর্তি পরীক্ষায় ভুল উত্তরের জন্য নম্বর কাটা, এবং কলেজ ভর্তি ফিতে স্বচ্ছতা আনা। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, সংঘর্ষের ফলে বহু ছাত্র এবং পুলিশ-বিজিবি সদস্য আহত হয়েছেন। তবে, বেশ কিছু আহত ছাত্র গেফতারির ভয়ে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাননি। পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি শান্ত না হওয়ায়, রাজধানী ঢাকার বেশ কিছু এলাকাতে যান চলাচল কম এবং স্কুল-কলেজগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে। এই অবস্থায়, আগামীদিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, এবং প্রশাসন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আরও পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।