বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হিসেবে মাউন্ট এভারেস্টের (৮,৮৪৮ মিটার) নাম সবাই জানে। কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এমন দুটি শৃঙ্গের সন্ধান পেয়েছেন, যেগুলি এভারেস্টের চেয়ে উচ্চতায় অনেক বেশি, এবং তা অনেকটা অবিশ্বাস্য। এসব শৃঙ্গের উচ্চতা ১০০ কিলোমিটার বা তারও বেশি হতে পারে, যা এভারেস্টের চেয়ে প্রায় ১০০ গুণেরও বেশি!
এই দুটি শৃঙ্গ পৃথিবীর বুকে প্রায় কোটি কোটি বছর ধরে অবস্থান করছে, তবে সেগুলি এতদিন অজ্ঞাত ছিল। বিজ্ঞানীরা তাদের এই আবিষ্কার করেছেন সিসমিক শকওয়েভ এবং ভূমিকম্পের গতি বিশ্লেষণ করে। এই শৃঙ্গ দুটি আফ্রিকা মহাদেশ এবং প্রশান্ত মহাসাগরের সংযোগস্থলে সমুদ্রের নিচে অবস্থান করছে। তাই এতদিন এগুলির অস্তিত্ব কেউ জানত না।
কলকাতা বিমানবন্দরে গড়ে উঠছে দেশের বৃহত্তম মেট্রো স্টেশন
বিজ্ঞানীদের মতে, এই দুটি শৃঙ্গ পৃথিবীর ‘কোর’ এবং ‘ম্যান্টেল’-এর মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থিত, যেখানে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন ‘সেমি-সলিড’। অর্থাৎ, এটি পুরোপুরি কঠিন নয়, কিছুটা তরলও রয়েছে। পৃথিবীর কেন্দ্রে তরল উত্তপ্ত লাভা এবং বাইরের দিকে কঠিন শিলা স্তর রয়েছে। এই শৃঙ্গ দুটি সেই মধ্যবর্তী এলাকায় দাঁড়িয়ে আছে। এই দুটি শৃঙ্গের বয়স সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন যে এগুলির বয়স অন্তত ৫০ কোটি বছর হতে পারে। তবে আরও গভীর গবেষণায় জানা গেছে, এগুলির বয়স পৃথিবীর বয়সের কাছাকাছি, অর্থাৎ প্রায় ৪০০ কোটি বছর। সেক্ষেত্রে, এই দুটি শৃঙ্গকে বয়সের দিক দিয়ে এভারেস্টের ঠাকুরদা বলা যেতে পারে, কারণ এভারেস্টের বয়স মাত্র ৬ কোটি বছর।
প্রসঙ্গত, এই শৃঙ্গ দুটি এতদিন সমুদ্রের তলায় চাপা পড়ে ছিল যে বিজ্ঞানীরা কখনও তাদের অস্তিত্ব জানত না। কিন্তু সিসমিক তরঙ্গের সাহায্যে বিজ্ঞানীরা সেগুলির সন্ধান পেয়েছেন। সিসমিক শকওয়েভ হল ভূমিকম্পের ঢেউ, যা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং ভূমিকম্পের গতি এবং পরিণতির ওপর নির্ভর করে বিজ্ঞানীরা ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলো বিশ্লেষণ করেন। সেই বিশ্লেষণের মাধ্যমেই তারা এই শৃঙ্গ দুটি খুঁজে পান। এই আবিষ্কার আরও একটি বিষয় স্পষ্ট করেছে: পৃথিবী এবং তার রহস্য নিয়ে আমরা এখনও অনেক কিছু জানি না। সমুদ্রের তলায় কি এমন আরও কিছু অজানা শৃঙ্গ, পর্বত বা ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য লুকিয়ে রয়েছে, তা সময়ই বলে দেবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ধরনের নতুন আবিষ্কার তাদের গবেষণার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা পৃথিবীর গঠন এবং ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস সম্পর্কে নতুন তথ্য দেবে। অতএব, যখন আপনি পরবর্তী বার এভারেস্টের শিখরে ওঠার স্বপ্ন দেখবেন, মনে রাখবেন পৃথিবীতে এমন আরও অনেক শৃঙ্গ রয়েছে, যেগুলি আমাদের চোখের অগোচরে থাকা রহস্যময় রূপে পৃথিবীর গভীরে অবস্থান করছে।