ফের শহরে ইডি অভিযান। তবে এবার রেশন কিংবা কয়লা পাচার অথবা শিক্ষা দুর্নীতির তদন্ত নয়। এবার বেসরকারি মেডিক্যালে কলেজে ভর্তির দুর্নীতি নিয়ে অভিযানে নামল ইডি। মূলত, জাল নথি দিয়ে এই দুর্নীতি হয়েছে। আজ, মঙ্গলবার কলকাতা, বজবজ, বোলপুর, শান্তিনিকেতন, পানাগড়, মলয়পিঠে, দুর্গাপুর, শিলিগুড়ি-সহ মোট কুড়িটি জায়গায় হানা দিয়েছে ইডি। তারই তদন্তে নেমে দেশের ২৮টি মেডিক্যাল কলেজে হানা দিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি।
প্রসঙ্গত, বিশেষ করে সল্টলেকের বিসি ব্লকের আবাসনগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে তল্লাশি চালানো হয়। জানা গেছে, এনআরআই কোটায় জাল নথি ব্যবহার করে বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রী এমবিবিএস কলেজে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এই ঘটনার তদন্তে ইডি গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে এবং তারা নিশ্চিত যে, তল্লাশি থেকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার হবে, যা এই দুর্নীতির মামলায় গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে। এর আগে কেন্দ্রীয় ইঞ্জিনিয়ারিং প্রবেশিকা পরীক্ষাতেও বড়সড় দুর্নীতির হদিস মিলেছিল। একটি বেসরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে অনলাইনে হওয়া এই পরীক্ষাকে প্রভাবিত করার অভিযোগ জমা পড়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কাছে।
উলেখ্য, রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে চলমান দুর্নীতির তদন্ত শুধু মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সম্প্রতি, কেন্দ্রীয় ইঞ্জিনিয়ারিং প্রবেশিকা পরীক্ষার (JEE) পরও বড় ধরনের দুর্নীতি প্রকাশ্যে এসেছে। সিবিআইয়ের কাছে অভিযোগ এসেছে, একটি বেসরকারি সংস্থা অনলাইনে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় প্রযুক্তির মাধ্যমে কিছু পরীক্ষার্থীকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এই সংস্থার কর্মী এবং শিক্ষকরা, রিমোট অ্যাক্সেসের মাধ্যমে, পরীক্ষার্থীদের হয়ে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর সিবিআই তদন্ত শুরু করেছে এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির দুর্নীতির তদন্তে আজকের তল্লাশি এইসব ঘটনারই অঙ্গ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইডি-র এই অভিযান রাজ্য সরকার ও শাসক দলের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হতে পারে, কারণ এ ধরনের অভিযানে সরকারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন উঠতে পারে। একই সঙ্গে, রাজ্যের জনমানসে এই অভিযানের প্রভাব অনেক বেশি পড়তে পারে, বিশেষ করে যদি এতে আরও বড় দুর্নীতির ছবি উন্মোচিত হয়।
ইতিমধ্যে, বীরভূমের বোলপুরের শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজে চলছে ইডির হানা। সূত্রের খবর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডির পাঁচ-ছয় জন সদস্য হানা দেন ওই মেডিক্যাল কলেজে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। ইডি হানা দিয়েছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার তিনটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে। একযোগে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ও কলকাতার সল্টলেকের পাশাপাশি, পূর্ব মেদিনীপুরেও মঙ্গলবার সকালে হানা দিয়েছে ইডি। সূত্রের খবর লক্ষণ শেঠের হলদিয়ার বাড়ি অঙ্গীকার-এ হানা দিয়েছে। ইডির দল পৌঁছে গিয়েছে হলদিয়ার আইকেয়ার ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্স হসপিটালেও। প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলায় এই তল্লাশি বলে জানা গেছে। দুটি দলে প্রায় ১০জন ইডির তদন্তকারী আধিকারিক রয়েছেন। সঙ্গে আধা সামরিক বাহিনীর ঘেরাটোপে রয়েছে হাসপাতাল চত্বর ও লক্ষণ শেঠের বাড়ির ক্যাম্পাস।
প্রসঙ্গত, অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে ভুয়ো সার্টিফিকেট বানিয়ে জমা করে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো হয়েছে। আর সেই কোটার যোগ্য পড়ুয়ারা বঞ্চিত হয়েছেন এতে। এই দুর্নীতির তদন্তে নেমে দেশজুড়ে একাধিক প্রথম সারির মেডিক্যাল কলেজের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ সামনে এসেছিল। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এই দুর্নীতি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন খোদ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। দুর্নীতির তদন্তে নেমে রাজ্যে মেগা অভিযান ইডির।