চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর জৌলুসের কাছে হার মানতে বাধ্য সকলেই

banner

journalist Name : Priyashree Khangar

#Pravati Sangbad Digital Desk:

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর জৌলুসের কাছে হার মানতে বাধ্য সকলেই। মায়াবী আলোর খেলা, সুউচ্চ মূর্তি, সোনা-রুপোর অলঙ্কারে সজ্জিত দেবী। চন্দননগরে দুর্গাপুজোর মতোই পাঁচদিন ধরে চলে জগদ্ধাত্রী পুজো। 

মা কালীর বিসর্জনের পরই হৈমন্তিকার আরাধনায় মেতে ওঠে বঙ্গবাসী। নদিয়ার কৃষ্ণনগর ও গঙ্গাপাড়ের শহর চন্দননগরে এখন সাজসাজ রব। কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষে জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এই সময় পুজো শুরু করেন। চলতি বছর ৭ নভেম্বর থেকে শুরু পুজো (Jagadhatri Puja 2024)। সেদিন ষষ্ঠী। দশমী ১১ নভেম্বর। জগদ্ধাত্রী হল হিন্দু দেবী দুর্গার একটি রূপ , যা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য এবং ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডের মতো অন্যান্য রাজ্যে পূজা করা হয় । জগদ্ধাত্রী পূজা হুগলি জেলার চন্দননগর শহর , নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর এবং পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণার ইছাপুর নবাবগঞ্জে বিশেষভাবে বিখ্যাত যেখানে এটি পাঁচ দিনব্যাপী উৎসব হিসেবে পালিত হয়। তার পূজা এবং আচার-অনুষ্ঠান তন্ত্র থেকে উদ্ভূত । এটা বিশ্বাস করা হয় যে তার উপাসনা তার ভক্তদের অহং এবং অন্যান্য সমস্ত বস্তুবাদী ইচ্ছা থেকে মুক্ত করে।

১৭৭২ সালে রাজবাড়ির দেখাদেখি কৃষ্ণনগরের চাষাপাড়ায় রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের প্রজারা জগদ্ধাত্রী পূজা শুরু করেন। বুড়িমার পূজা নামে পরিচিত এই পূজা শুরু হয়েছিল ঘটে ও পটে। প্রথম দিকে স্থানীয় গোয়ালারা দুধ বিক্রি করে এই পূজার আয়োজন করতেন। ১৭৯০ সাল নাগাদ গোবিন্দ ঘোষ ঘটপটের পরিবর্তে প্রতিমায় জগদ্ধাত্রী পূজার সূচনা করেন।

হুগলির অন্যতম ঐতিহাসিক শহর চন্দননগর। এখানকার প্রধান উৎসব জগদ্ধাত্রী পুজো। বাংলায় জগদ্ধাত্রী পুজো প্রথম কৃষ্ণনগরের শুরু হয়। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এই পুজো শুরু করেছিলেন। সেখানে থেকেই পরবর্তীকালে এই পুজো আসে হুগলী চন্দননগরে। প্রচারের দিক থেকে কৃষ্ণনগরের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে চন্দননগর।

চন্দননগরে অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি এই পুজোর প্রচলন হয়। অধ্যাপক বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘চন্দননগর জগদ্ধাত্রী পুজোর বিবরণ ও কয়েকটি ভুল তথ্যের কথা’ প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ নয়, মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের বিশ্বস্ত অনুচর দাতারাম সুর রাজার অনুদান নিয়ে ১৭৬২ সালে প্রথম গৌরহাটি গ্রামে তাঁর বিধবা কন্যার বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পূজা অনুষ্ঠান করেছিলেন। প্রথম দিকে এই পুজো ছিল রাজাদের। পরে সামন্ত, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ে। উপনিবেশ স্থাপনের উদ্দেশ্যে ফরাসিদের চন্দননগরে আগমনের পরেই এখানে সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পূজার সূচনা হয়।

একটি মত বলে, নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমলেই শুরু চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো। তখন ১৭১০ সাল, কোনও এক কারণে নবাবের হাতে বন্দি হয়েছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। তাই দুর্গাপুজোর সময় মায়ের দর্শন হয়নি তাঁর।


মায়ের পুজোয় না থাকতে পারায় বেজায় মন খারাপ হয় রাজার। কারাগারে থাকাকালীন সময়ে রাজা দেবীর স্বপ্নাদেশ পান। কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে মায়ের চতুর্ভূজা রূপের আরাধনা করার আদেশ পান রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। সেই মতোই কারামুক্ত হয়ে জগদ্ধাত্রী পুজোর শুরু করেন দেবী। 

আরেকটি মতে চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু হয়েছিল, ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর হাত ধরে। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ঘনিষ্ঠ ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী ছিলেন ফরাসি সরকারের দেওয়ান। শোনা যায়, কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের বাড়ির পুজোয় অতিথি হিসাবে গিয়েছিলেন তিনি।

কৃষ্ণচন্দ্রের বাড়ির সেই পুজো দেখে মুগ্ধ হয়ে যান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী। ইন্দ্রনারায়ণ ছিলেন চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জের চাউলপট্টির বাসিন্দা। সেখানেই চাউলপট্টির নিচুপাটিতে ইন্দ্রনারায়ণ প্রথম শুরু করেন জগদ্ধাত্রী পুজো। তবে এই কাহিনী নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। অনেকের মতে ১৭৫৬ সালে মৃত্যু হয় ইন্দ্রনারায়ণের, কিন্তু সেই সময় জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু হয়েছিল কি না তা নিয়েও মতভেদ রয়েছে।

অন্য মতে, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দেওয়ান ছিলেন দাতারাম শূর। দাতারামের বসবাস ছিল ভদ্রেশ্বরের গৌরহাটি অঞ্চলে। জনশ্রুতি, এখানেই আনুমানিক ১৭৬২ সাল নাগাদ দাতারামের বিধবা মেয়ে তাঁর বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেছিলেন। অনেকের মতে এ পুজোতেও অনুদান দিতেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র।

Tags:

#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image

ধর্ম উৎসব কলকাতা রাজ্য
Related News