কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে পালন করা হয় ভাইফোঁটা। সেই অনুযায়ী এটি ভ্রাতৃদ্বিতীয়া নামেও পরিচিত। তবে অনেক বাড়িতে প্রতিপদেও ভাইকে ফোঁটা দেওয়ার রীতি রয়েছে।
ভাইফোঁটা বা ভ্রাতৃদ্বিতীয়া হলো হিন্দুদের একটি উৎসব। কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে এই উৎসব পালিত হয়। কালীপুজো এবং দীপাবলির ঠিক পরেই বাঙালির ঘরে ঘরে উদযাপিত হয় ভাইফোঁটা৷ আশ্বিন বা কার্তিক মাসের শুক্লাপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে দাদা বা ভাইয়ের কপালে মঙ্গলতিলক এঁকে শুভকামনা করেন বোন বা দিদিরা।
ভাইফোঁটার উদ্দেশ্য হলো ভাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনা করা এবং ভাইবোনের ভালো সম্পর্ককে দৃঢ় করা। এই উৎসবের রীতিগুলি হলো: বোনেরা ভাইয়ের কপালে মঙ্গলটিকা বা ফোঁটা দেন, ভাইকে মিষ্টিমুখ করানো হয়, প্রীতি উপহার বিনিময় করা হয়। মর্তলোকে ভাইফোঁটার সূচনা
পশ্চিম ভারতে এই উৎসব ভাইদুজ নামেও পরিচিত। কিছু জায়গায় প্রতিপদে ভাইফোঁটা হয়। অবশ্য বেশিরভাগ জায়গাতেই দ্বিতীয়াতে ফোঁটা দেওয়ার প্রচলন।
পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ববঙ্গের ভাইফোঁটার রীতি ঘিরে কিছু বৈচিত্র্য রয়েছে। পূর্ববঙ্গের লোকেরা বহু জায়গায় দ্বিতীয়া ও প্রতিপদ মিলিয়ে ভাই ফোঁটা দেয়। তিলকের পরে অনেকে ভাইকে আরতির থালায় প্লেটে সিঁদুর, চন্দন, ফল, ফুল, মিষ্টি এবং সুপারি থাকতে হবে। আরতির আগে ফল, সুপারি, স্ফটিক চিনি, পান, কালো ছোলা দেন।
কার্তিকের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে পালিত হয় ভাইফোঁটা উৎসব। ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়ে এই উৎসব পালিত হয়। গোটা দিন জুড়ে ভাইয়ের জন্য নানান রকমের পদ রান্না করেন তাঁরা। এই বিশেষ দিন ভাই বোনের অবিচ্ছেদ্য ভালোবাসাকে উদযাপন করে পালিত হয় ভাইফোঁটা। এই ভাইফোঁটা উৎসব ঘিরে বাংলার ঘরে ঘরে নানান রসনার আয়োজন হয়। বিশেষত নানান রকমের মিষ্টি তৈরি হয়।
ভাইকে সর্বদা উত্তর দিকে বা উত্তর পূর্ব দিকে মুখ করে বসিয়ে ফোঁটা দেওয়ার রীতি রয়েছে। কখনওই ভাইকে মেঝেতে বসিয়ে ফোঁটা দিতে নেই। বোন বা দিদি যিনি ফোঁটা দিচ্ছেন, তাঁর মুখ যেন উত্তর দিকে থাকে।
প্রতিপদ শুরু: বাংলা- ৩ কার্তিক, ১৪৩২। ইংরেজি- ২১ অক্টোবর, ২০২৫। সময়- বিকেল ৪টে ২৫ মিনিট।
প্রতিপদ শেষ: বাংলা- ৪ কার্তিক, ১৪৩২। ইংরেজি- ২২ অক্টোবর, ২০২৫। সময়- সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিট।
দ্বিতীয়া
তিথি শুরু: ২২ অক্টোবর, বুধবার
রাত ৮টা ১৬ মিনিট
থেকে (অন্যান্য পঞ্জিকা অনুযায়ী এটি ২২ অক্টোবর
রাত ১২টা ৪৬ মিনিটও
থাকতে পারে)।
দ্বিতীয়া
তিথি শেষ: ২৩ অক্টোবর,
বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ৪৬
মিনিট পর্যন্ত (অন্যান্য পঞ্জিকা অনুযায়ী এটি ২৪ অক্টোবর
ভোর ৩টে ১৬ মিনিট
পর্যন্তও থাকতে পারে)।
যেহেতু উদয়া তিথি অনুযায়ী দিনটি ২৩ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) পড়ছে এবং এই তিথিতেই দিনের অধিকাংশ সময় ধরে দ্বিতীয়া বিদ্যমান, তাই ২৩ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) ভাইফোঁটা পালন করা হবে। এই সময়ের মধ্যেই সারতে হবে ভাইফোঁটা।
কথিত রয়েছে, এই বিশেষ তিথিতে যমরাজ তাঁর বোন যমুনার থেকে ফোঁটা নিয়েছিলেন। এই উৎসব তাই যমন দ্বিতীয়া নামে পরিচিত। আরেকটি মত বলছে, শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুর বধ করে এমন দিনে বোন সুভদ্রার কাছে গিয়েছিলেন। সেই দিন সুভদ্রা তাঁর কপালে দেন তিলক। তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করেই এই তিলক দেওয়া হয়।