বাংলা ক্যালেন্ডারে হাজির অগ্রহায়ণ বা অঘ্রাণ মাস, একে বলা হয় মার্গশীর্ষ৷ এই মাসের উল্লেখযোগ্য পার্বণ হল ইতু পুজো৷ গ্রামবাংলার মানুষদের উৎসবের মধ্যে অন্যতম হল ইতু পুজো৷ এই অঘ্রাণেই ঘরে আসে নতুন ধান, হয় নবান্ন উৎসব। একটি মত বলে ইতু পুজো আসলে সূর্যদেবের পুজো৷ সূর্যের আর এক নাম সবিতা৷ এই সবিতারই অপভ্রংশ হল ইতু৷ আবার অন্য মতে ইতুপুজোয় আসলে উপাসন করা হয় ইন্দ্রের৷ কার্তিক সংক্রান্তিতে এই ব্রত শুরু হয়। পুরো অগ্রহায়ণ মাস ধরে এই ব্রত পালন করা হয়। অগ্রহায়ণের সংক্রান্তির দিন এই ব্রত শেষ হয় ইতু বিসর্জনের মধ্য দিয়ে।
উলেখ্য, ইতু পুজো সারা অগ্রহায়ন মাস জুড়ে হয়। অগ্রহায়ণের সংক্রান্তির দিন এই ব্রত শেষ হয়। এই পুজো সাধারণত, কুমারি বা বিবাহিতরা করে থাকেন। কার্তিক মাসের সংক্রান্তির দিন পরিষ্কার জায়গাতে সরার মাঝখানে ঘট বসানো হয়। সিঁদুর, হলুদ ফুল, বেলপাতা, তিল, ঙরতকী. ধূপ, প্রদী, ফলের ও মিষ্টির নৈবেদ্য সাজিয়ে পুজো করা হয়। ঘট ও সরার মধ্যে ধান, হলুদ, মানকচু,গম, মটর, সরষে, শুসনি, কলমি ও পাঁচটি ডালের বীজ ইত্যাদি শস্য ও সবজি বসিয়ে প্রতি রবিবার পুজো করা হয়।
প্রসঙ্গত, এই মাসের প্রতি রবিবার এই পুজো করলে সূর্যের পুজো করা হয় বলে মনে করা হয়। গত ১৬ই নভেম্বর শুরু হয়েছিল এবং শেষ হবে আগামি রবিবার ১৫ই ডিসেম্বর শেষ হবে। পুজো শেষ হয়ে গেলে ঘটটি পুকুরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। সংক্রান্তির দিন সকালে স্নান করে, পরিষ্কার পোশাক পরে ইতুর সরা ও ঘটের সামনে প্রদীপ জ্বালানো হয়। এছারাও নতুন চাল দিয়ে সরুচাকলি, পিঠে ও পুলি রান্না করা হয়। এদিন যেমন পিঠ খাওয়ার চল রয়েছে, তেমনি নবান্নে মতো নতুন ফল ও সবজি, গুড়ও খাওয়া হয়। এদিন পরিবারে সুখ-সমৃদ্ধি, সন্তান কামনার জন্য ইতু পুজোর ব্রত পালন করা হয়। যিনি ব্রতীকে বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয় সারাদিন। ব্রতের জন্য উপবাস বা নিরামিষ খাওয়ারও চল রয়েছে এদিন। এই পুজোয় সাধারণত কোনও মূর্তি নেই। মাটির সরা বা ঘটকেই পুজো করা হয় বাঙালির ঘরে ঘরে। সূর্যদেব হল ঘোড়ার প্রতীক। বাংলা এই ব্রত বিলুপ্রপ্রায় হলেও এখনও এই পুজোর গুরুত্ব রয়েছে। বাঙালির ঘরে দেবীদের প্রাধান্য সবচেয়ে বেশি হলেও ইতু হল দেবতার পুজো।