নজির-বিহীন ভাবে আন্দোলন চলছে, ডাক্তারদের কর্মবিরতি ওঠা নিয়ে রফাসূত্র অধরাঃ এর দায় কার?
শনিবার কালীঘাটে নিজের বাড়িতে আলোচনার জন্য জুনিয়র ডাক্তারদের ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এর আগে নবান্নের বৈঠক ভেস্তে গিয়েছিল লাইভ স্ট্রিমিং-এর কারণে। এবারও সেই লাইভ স্ট্রিমিং নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। শেষপর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ভেস্তে যায় আন্দোলনরত চিকিৎসকদের। তাই ডাক্তারদের কর্মবিরতি ওঠা নিয়ে রফাসূত্র অধরাই থেকে গিয়েছে।
শনিবার রাতে আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় তথ্য-প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে সিবিআই প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার ওসিকে গ্রেফতার করেছে। শুধু এই একটি ঘোষণা স্বাস্থ্য ভবনের সামনে বসে থাকা ডাক্তারদের চোয়াল ও মুঠো শক্ত করতে যেমন অনুঘটকের কাজ করেছে, তেমনই শনিবার সকাল থেকে উচ্ছ্বসিত তৃণমূল শিবিরকে কিছুটা দমিয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি এমনই যেন সারা দিনের উপার্জন জলে চলে গেল।
রাজনীতিতে অনেক কিছুই ধারণায় চলে। জুনিয়র ডাক্তারদের প্রথম দিন থেকে অভিযোগ ছিল আরজি করে প্রমাণ লোপাট করা হয়েছে। তাঁদের মতই বিপুল সংখ্যক মানুষও তা মনে করেন। প্রকৃতপক্ষে কী হয়েছে অবশ্য তা অনেকেই জানেন না। কারণ, তদন্ত শেষ হয়নি। কিন্তু টালা থানার ওসি গ্রেফতার হওয়ার পর জুনিয়র ডাক্তারদের সেই সন্দেহ ও অভিযোগ আরও জোরাল হয়ে গেল বলেই মনে করা হচ্ছে।
পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, এর পর জুনিয়র ডাক্তাররা আর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে যাবেন কিনা সংশয় রয়েছে।
সিবিআই টালা থানার ওসি অভিজিৎ মন্ডল এবং আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করেছে। এই নিয়ে শান্তনু সেন পোস্ট করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। ফেসবুকে শান্তনু সেন লিখলেন, "আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত, অপরাধ মনষ্ক লোকটির বিরুদ্ধে প্রথম সোচ্চার হয়েছিলাম আমি।
সঠিক ছিলাম, তা ঈশ্বর আজ আরো একবার প্রমাণ করলেন"।
এর আগে আর্থিক তছরূপ মামলায় সন্দীপ ঘোষ। গ্রেফতার হয়েছিলেন। তখন অর্থাৎ ২ সেপ্টেম্বর শান্তনু লিখেছিলেন, "ঈশ্বর বিচার করলেন। প্রমাণ হল আমি ভুল বলিনি। সঠিক জায়গায় দুর্নীতির তথ্যগুলো অনেক আগেই জানিয়েছিলাম"।
তৃণমূলের প্রথম সারির নেতাদের মধ্যে আছেন শান্তনু সেন। তাকেই সম্প্রতি মুখপাত্র পদ থেকে সরানো হয়েছে।
১৩ সেপ্টেম্বর টুইট করেছিলেন সুখেন্দুশেখর, যা এখন আর তার পেজে দেখা যাচ্ছে না।
এর আগে এই ইস্যুতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠিও দেন তিনি। এমন ঘটনা যেন দেশের আর কোথাও ভবিষ্যতে না হয় সেজন্য আরও কঠোর আইন আনা জরুরি বলে দাবি তোলেন সুখেন্দু। শীতকালীন অধিবেশনেই যাতে এই সংক্রান্ত বিল আনা হয়, সে আর্জিও করেন।
আরজি কর ইস্যুতে তাঁর ক্রমাগত এমন পোস্ট যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে আরও চাপে ফেলছে তা বলা যায়। সম্প্রতি আরজি কর কাণ্ডের জেরেই রাজ্যসভার পদ ছেড়েছেন তৃণমূলের জহর সরকার। সুখেন্দুও পদ ছাড়বেন কিনা, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে আরজি করে ডাক্তারি ছাত্রীকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে শনিবার রাতে টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। তারপরই সুখেন্দুশেখর পোস্টটি মুছে ফেলেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে কী কারণে তিনি পোস্টটি মুছেছেন তা স্পষ্ট নয়, যা নিয়ে কৌতূহল বাড়ছে সব মহলে।
এদিকে বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার অভিযোগের আঙুল উঠেছে ডঃ রুমেলিকা কুমার, ডঃঅর্ণব মুখোপাধ্যায়ের মতো 'অতি বাম' হিসেবে পরিচিত চিকিৎসকদের দিকে। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে চাইলেও তাঁদের অভিযোগ, ডাক্তারদের ফিরিয়ে দেন মুখ্যসচিব এবং স্বাস্থ্যপ্রতিমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসার জন্য তাঁরা যে কতটা নমনীয় হয়েছিলেন, সেটাও জানিয়েছেন ওই জুনিয়র ডাক্তার। চোখের জলে তিনি বলতে থাকেন, ‘শেষে আমরা শুধু বৈঠকের কার্যাবিবরণী নথিভুক্ত করার প্রস্তাবেও রাজি ছিলাম। (আর্জি ছিল) যে কথা বলুন, কথা বলুন আমাদের সঙ্গে। আমাদের এসে বিচারটা দিন। এই বিচারের রাস্তায় আমাদের কিছুটা আশার আলো দেখান। তাও ওঁনারা ওটা শুনলেন না।’