গত ৫ অগস্ট শেখ
হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশে
৫২টি জেলায় অন্তত ২০৫টি হামলার ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। রবিবার অন্তর্বর্তী সরকার তাঁদের প্রথম আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলেছে, “কিছু জায়গায় ধর্মীয়
সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনা
ঘটেছে। এই ঘটনাগুলি উদ্বেগজনক।
আমরা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি।”
নিজেদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে হিন্দু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংগঠনগুলি। ইউনূসের সঙ্গে দেখা করার আগে আট দফা দাবির তালিকা তৈরি করেছে হিন্দু ছাত্র সংগঠনগুলি। তাঁদের দাবি, হিন্দুদের ওপর হামলার মামলাগুলির দ্রুত বিচারের জন্য একটি বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করা। পাশাপাশি দেশে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনের প্রণয়ন, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে একটি ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা, পালি শিক্ষা বোর্ডের আধুনিকীকরণ, শারদীয়া দুর্গাপূজায় পাঁচ দিনের ছুটি ঘোষণা একটি সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রক গঠন।
হিন্দুদের
মন্দির ও সম্পত্তির ওপর
নির্বিচারে হামলায় অভিযোগের আঙুল ওঠে জামাতের
বিরুদ্ধে। আর এই ঘটনায়
মুখ পুড়েছে বাংলাদেশে নবগঠিত সরকারের। কারণ পরিবর্তনের আশা
দেখিয়েই ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল তাঁরা।
কিন্তু অযাচিত এই হিংসা অস্বস্তিতে
ফেলে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে।
রবিবার সেই নিয়েই প্রথমবার
মুখ খোলে নতুন সরকার।
সাম্প্রতিক এই ঘটনাগুলিতে ‘গভীর
উদ্বেগ’ প্রকাশ
করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলী।
মুহাম্মদ ইউনূস এর আগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলার নিন্দা করে, তাঁদের “জঘন্য” বলে অভিহিত করে যুবকদের হিন্দু, খ্রিস্টান এবং বৌদ্ধ পরিবারগুলিকে রক্ষা করার আহ্বানও জানিয়েছিলেন।
শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বজুড়ে আলোচিত তাঁর থ্রি-জিরো তত্ত্বের জন্য। সেগুলো হচ্ছে দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা। আর তা অর্জনে লাগবে তারুণ্য, প্রযুক্তি, সুশাসন ও সামাজিক ব্যবসা। টেকসই উন্নয়নের এই তত্ত্বের প্রয়োগের মাধ্যমেই তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এগিয়ে নিতে চাইবেন বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
গ্রামীণ ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ ধারণার প্রবর্তক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর এই অবদানের জন্য তিনি শান্তিতে নোবেল পান ২০০৬ সালে। এই ক্ষুদ্রঋণ ধারণার মূল লক্ষ্যই ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়া।
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াও গোটা বিশ্বেরই চোখ টেকসই উন্নয়নে। বাংলাদেশে এই যাত্রায় প্রায় শূন্য থেকেই শুরু করতে হবে এই নোবেলজয়ীকে। আর এই লক্ষ্য অর্জনে সামনে থাকছে তাঁর নিজের তত্ত্ব থ্রি-জিরো। এক্ষেত্রে শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও কার্বন নিঃসরণ।
এই তত্ত্বের ব্যাপারে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদের ভাষ্য, ‘বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিজেই দারিদ্র্য সৃষ্টি করে এবং এই ব্যবস্থার অধীনে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব নয়। মানুষ এককভাবে দারিদ্র্য তৈরি করে না, আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামোর ভেতরেই তৈরি হয় দারিদ্র্য।’
এই লক্ষ্য অর্জনে তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন তারুণ্য, প্রযুক্তি, সুশাসন ও সামাজিক ব্যবসায়। তাঁর মতে, ভালো চাকরি না খোঁজে উদ্যোক্তা তৈরিতে জোর দিতে হবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা জন্মেছি সমস্যা সমাধানের জন্য। কারও অধীনে চাকুরি করার জন্য নয়। তাই তরুণ প্রজন্মকে উদ্যোক্তা হতে হবে। কারও অধীনে নয়, বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে হবে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েই।’
১৯৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারে উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।