বয়স এখনও পঁচিশের কোটা পেরোয়নি। কাঁধে ৯ জনের সংসারের ভার রয়েছে। আইপিএলে ব্যাট চালিয়ে আপনজনদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছেন রিঙ্কু সিং। শুধু নিজের কাছের মানুষগুলো নয়, রিঙ্কুর কেরামতি রবিবার হাসি ফিরিয়েছে দেশজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কেকেআর সমর্থকদের মুখেও।
দলকে অক্সিজেন জুগিয়েছে শেষ ওভারে তাঁর ব্যাটের ছক্কা-ঝড়।
আইপিএলে নাইটদের সংসারে রিঙ্কুর আগমন বছর পাঁচেক আগে। ২০১৮ সালে ৮০ লাখ টাকায় রিঙ্কুকে কেনে শাহরুখ খানের ফ্র্যাঞ্চাইজি। এর আগে একবছর ১০ লাখের বিনিময়ে পাঞ্জাবের দলেও ছিলেন রিঙ্কু। তবে বাইশ গজে নামতে রিঙ্কুকে অপেক্ষা করতে হয়েছে পাঁচ-পাঁচটা বছর। অবশেষে আইপিএলের চলতি সিজনে শ্রেয়স আইয়ারের দলে সুযোগ পেয়েছেন বাঁ হাতি এই ব্যাটসম্যান। আর সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছেন শুরু থেকেই।
রিংকু খুব গরীব ঘর থেকে এসেছেন। তাঁর বাবা ঘরে ঘরে গ্যাস সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতেন। আর পুরো পরিবার একই সিলিন্ডার ডিস্ট্রিবিউশন এজেন্সির লাগোয়া দুই কামরার বাড়িতে থাকত। আলীগড় স্টেডিয়ামের কাছে বসবাসকারী এই পরিবারের পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিন নম্বরে রিংকু। তাঁর বড় ভাই অটোরিকশা চালান। অন্যজন কোচিং সেন্টারে কাজ করেন। নিলামে বিক্রি হওয়ার পaর রিংকু ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের দেবেন্দ্র পান্ডেকে বলেন,'ভেবেছিলাম ২০ লাখেই কেউ আমাকে কিনবে। কিন্তু আমি ৮০ লক্ষ পেয়েছি। টাকা পাওয়ার পর আমার মাথায় প্রথম যেটা আসে সেটা হল আমি আমার ভাইয়ের বিয়ে দিতে হবে। আর আমিও আমার বোনের বিয়ের টাকা জমাতে পারব। আমরা আরও ভাল একটা বাড়িতে চলে যাব।''
আসলে তিন বছর আগে রিঙ্কুর পরিবারের পাঁচ লক্ষ টাকা দেনা ছিল। আর পরিবারের উপার্জনের এই টাকা ফেরত দেওয়া একেবারেই সহজ ছিল না। নবম শ্রেণিতে ফেল করা রিংকু পড়াশোনায় খুব একটা ভাল ছিলেন না। সে কারণেই তিনি জানতেন যে তাঁর ভাগ্য কেবল ক্রিকেটেই ঘুরিয়ে দিতে পারে। এমতাবস্থায় তিনি এ বিষয়ে পূর্ণ মনোযোগ দেন রিঙ্কু।
উত্তরপ্রদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলার সময় এই ঋণ শোধ করতে রিংকু প্রতিদিনের খরচের টাকাসহ সব টাকাই খরচ করেন। এ বিষয়ে রিংকু বলেছিলেন, ''বাবা আর ভাই মাসে আয় করতেন মাত্র ৬-৭ হাজার। আমার পরিবার একটু বড়, তাই ক্রিকেটে মনোযোগ দেওয়া ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিল না। জীবনে অনেক কষ্ট করেছি।''
আইপিএলের অর্থে নিজের বাড়ি করেছেন কেকেআরের রিঙ্কু। কিন্তু সেই বাড়িতে বাবাকে নিয়ে যেতে পারেননি। রিঙ্কুর হাতে টাকা এলেও পুরনো জীবন ছাড়তে চাননি তাঁর বাবা। তিনি এখনও বাড়ি বাড়ি গ্যাস পৌঁছে দিয়ে আসেন। ছেলের টাকায় গড়া বাড়িতে তিনি থাকতে চাননি।
কঠিন সময় পেরিয়ে রিঙ্কু এখন আইপিএলের ‘হিরো’। তাঁর নামে চার দিকে জয়জয়কার। অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলে রিঙ্কু আবার প্রমাণ করেছেন, ক্রিকেট আসলে অনিশ্চয়তার খেলা। বাইশ গজের লড়াইয়ে কখন যে কী হয়...!