মারাত্মক নাক ডাকেন? পাশে কেউ শুতে চায় না? ঘুম ভেঙে যায়? সারাদিন ঝিমুনি? ঘুমের মধ্যেই হতে পারে হার্ট অ্যাটাক। হতে পারে স্লিপ অ্যাপনিয়াও। ডেকে আনতে পারে ভয়ঙ্কর বিপদ। সাবধান হোন এখনই। উপযুক্ত ডাক্তারি পরামর্শ নিন। আধুনিক সরঞ্জামের মাধ্যমে ঘুম স্বাভাবিক করা সম্ভব। নাক ডাকা বন্ধ করারও উপায় রয়েছে।
কিছু ব্যক্তি এই রোগকে অতি সাধারণভাবে গ্রহণ করলেও চিকিৎসকদের ভাষায় এটি খুবই জটিল রোগ। কারণ সম্প্রতি শিল্পী জগতের সংগীতকার বাপি লাহিড়ী স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোক গমন করেছেন। সেক্ষেত্রে এই রোগটাকে খুব একটা হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয় বলেই দাবি করেন চিকিৎসকেরা। তবে চিকিৎসকদের প্রাথমিক রুটিন অনুযায়ী স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগের প্রথম লক্ষ্যণ হল রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় নাক ডাকা। যে সমস্ত ব্যক্তির নিঃশ্বাস গ্রহনের সময় নাকে অক্সিজেন বাধাপ্রাপ্ত হয় সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে তারা স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগে আক্রান্ত।
কেন নাক ডাকে?
অনেকসময় নাকে মাংস বৃদ্ধির ফলে নাকের নালি ছোট হয়ে শ্বাসপ্রশ্বাসে বাধার সৃষ্টি করে। শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গলার চারপাশে চর্বি জমা হয়। কমে যায় গলার পেশির নমনীয়তা। তখন নাক ডাকার সমস্যা হতে পারে। জন্মগত কারণে শ্বাসযন্ত্র সরু হলে বা চোয়ালে কোনও সমস্যা থাকলে নাক ডাকতে পারে। ধূমপান, অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা ঘুমের ওষুধ এই সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। থাইরয়েডের সমস্যা ও গ্রোথ গরমোনের আধিক্যজনিত রোগেও নাক ডাকতে পারে। অনেক সময় চিত হয়ে ঘুমোলে জিভ পিছনে চলে গিয়ে শ্বাসনালি বন্ধ করে দেয়।
স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগটি বিভিন্ন ধাপে হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যেমন মাইল্ড মডারেট সিভিয়ার। তবে কোন ব্যক্তির স্লিপ অ্যাপনিয়া হয়েছে কিনা সেটা বুঝতে গেলে প্রথমে কিছু টেস্ট করতে হবে। যেমন পলিসোমনোগ্রাফি। এই সমস্যা কমানোর জন্য বিভিন্ন ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। যার মধ্যে প্রথমত হল আক্রান্ত ব্যক্তি এক পাশ হয়ে শুলে বা ওজন কমালে। তবে প্রাকৃতিক উপায়ে স্লিপ অ্যাপনিয়ার সম্পূর্ন নিরাময় করা যায় না। স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগ থেকে মুক্ত হতে গেলে ওজন কমাতে হবে, অ্যালকোহল ত্যাগ করতে হবে, নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে এবং ঘুমের ওষুধ থেকে বিরত থাকতে হবে। এই উপায় গুলি প্রাথমিক পর্যায়ে স্লিপ অ্যাপনিয়ার ক্ষেত্রে যথার্থ। কিন্তু কেউ যদি গুরুতরভাবে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে তার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই রোগ বোঝা যায় রাতে নাক বন্ধ হয়ে গেলে এবং নাক ডাকার লক্ষণ দেখে। এই রোগে একজন ব্যক্তির নাকে গলায় তালুতে ব্লকেজ তৈরি হয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে যা মস্তিষ্ক পর্যন্ত অক্সিজেন পৌঁছানো বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যখন অক্সিজেন ব্রেন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনা তখন দীর্ঘ দিন ধরে এই রোগে শরীরের প্রত্যেকটি প্রত্যঙ্গকে প্রভাবিত করতে শুরু করে। যেমন হার্ট, লাংস ইত্যাদি এমনকি গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে এরকম রোগ থাকলে তাদের গর্ভপাত পর্যন্ত হতে পারে। তবে স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তির যে খুব শীঘ্রই মৃত্যু হবে সেটা ঠিক কথা নয়। আক্রান্ত ব্যক্তি দীর্ঘ জীবন বাঁচতে পারবেন। কিছু চিকিৎসা যেমন সিপ্যাপ, দাতের ব্রেস বা অপারেশন করতে হতে পারে। বর্তমান দিনে বাজারে এমন কিছু ছোট আকৃতির পেসমেকারের উদ্ভাবন ঘটেছে যেগুলো ব্যবহার করলে এই রোগ থেকে কিছুটা হলেও নিরাময় পাওয়া যায়।