গ্যাসের সমস্যা ভোগে না এমন লোককে খুঁজে পাওয়া দায়। ফাস্ট ফুড, ব্যস্ত জীবনযাত্রার যুগে গ্যাস, অম্বল প্রায় ঘরোয়া রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কোনও ঘরে গেলেই অন্তত গ্যাসের এক পাতা ওষুধ অবশ্যই মিলবে। তবে কী গাদা গাদা গ্যাসের ওষুধ খেয়েও সমস্যা দূর হয় না। কিন্তু ঘরোয় কিছু উপায় আছে যেগুলি প্রয়োগ করলে গ্যাস-অম্বলকে দূরে রাখা যায়। প্রাকৃতিক ও সহজে পাওয়া যায় এমন সব জিনিস দিয়ে গ্যাস, বুক জ্বালা-অম্বল দূরে রাখুন-
আদাঃ আদা সবচাইতে কার্যকরী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার। আদা গ্যাসের সমস্যা, বুক জ্বালাপোড়া, হজমে সমস্যা এবং অ্যাসিডিটির সমস্যা দ্রুত সমাধানে সক্ষম। পেট ফাঁপা এবং পেটে গ্যাস হলে কাঁচা আদা কুচি করে লবণ দিয়ে খান, দেখবেন গ্যাসের সমস্যার দ্রুত সমাধান পাবেন।
দইঃ দইয়ে ল্যাকটোব্যাকিলাস, অ্যাসিডোফিলাস ও বিফিডাসের মতো নানা ধরনের উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে। এই সকল উপকারী ব্যাকটেরিয়া দ্রুত খাবার হজমে সাহায্য করে সেই সাথে খারাপ ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। তাই দই খেলে হজম ভালো হয়, গ্যাস কমে। এই জন্যই খাবারের পর দই খাওয়া বেশ কার্যকর।
দারুচিনি-হজমের জন্য খুবই ভাল। এক গ্লাস জলে আধ চামচ দারুচিনির গুঁড়ো দিয়ে ফুটিয়ে দিনে ২ থেকে ৩ বার খেলে গ্যাস দূরে থাকবে।
মৌরির জল-মৌরি ভিজিয়ে সেই জল খেলে গ্যাস থাকে।
জিরে-জিরে পেটের গ্যাস, বমি, পায়খানা, রক্তবিকার প্রভৃতিতে অত্যন্ত ফলপ্রদ। জ্বর হলে ৫০ গ্রাম জিরা আখের গুড়ের মধ্যে ভালো করে মিশিয়ে ১০ গ্রাম করে পাঁচটি বড়ি তৈরি করতে হবে। দিনে তিনবার এর একটি করে বড়ি খেলে ঘাম দিয়ে জ্বর সেরে যাবে।
শসাঃ শসা পেট ঠাণ্ডা রাখতে বেশ কার্যকরী একটি খাবার। কাঁচা শসা চিবিয়ে খেলে হজমে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। কারণ এতে রয়েছে ফ্লেভানয়েড এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা পেটে গ্যাসের উদ্রেক কমায়। তাছাড়া এতে প্রচুর সিলিকা ও ভিটামিন সি আছে, যাঁরা দেহের ওজন কমাতে চান, তাঁদের জন্য শসা আদর্শ টনিক হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া নিয়মিত শসা খেলে দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
পেঁপেঃ পেঁপেতে রয়েছে পেপেইন নামক এনজাইম যা হজমশক্তি বাড়ায়। তাই নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করলে গ্যাসের সমস্যা কমে।
আনারসঃ আনারসে রয়েছে ৮৫ শতাংশ জল এবং ব্রোমেলিন নামক হজমে সাহায্যকারী প্রাকৃতিক এনজাইম যা অত্যন্ত কার্যকরী একটি পাচক রস। এটি পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার রাখে। তাছাড়া আনারস ত্বকের জন্যও উপকারী।
পুদিনা পাতার জল-এক কাপ জলে ৫টা পুদিনা পাতা দিয়ে ফুটিয়ে খান। পেট ফাঁপা, বমিভাব দূরে রাখতে এর বিকল্প নেই।
আমলা-আমলা টুকরো করে রোদে দিয়ে খান কাজে দেবে। পেটে গ্যাস ও বদহজমজনিত সমস্যা সমাধানে আদা খুব উপকারী। খাবারে আদা যোগ করে বা কিছু পরিমাণ আদা চিবিয়ে রসটুকু গ্রহণ করলে পেটে গ্যাস প্রতিরোধ করা যায়।
হলুদঃ হজমসংক্রান্ত সব ধরনের সমস্যা সমাধানে হলুদ দারুণ কার্যকর। এটি চর্বিজাতীয় খাবার হজমে ভূমিকা রাখে। তাছাড়া হলুদে প্রদাহনাশক উপাদান থাকে, যা প্রদাহ কমায়।
কলাঃ যাঁরা বেশি করে লবণ খান, তাদের গ্যাস ও হজমে সমস্যা হতে পারে। কলায় যে পটাশিয়াম থাকে, তাতে শরীরের সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের ভারসাম্য বজায় থাকে। কলা হজমে সাহায্য করে। দেহ থেকে দূষিত পদার্থ দূর করে দেয়।
জল: জল পানের সুফলের কথা সবাই জানেন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই গ্লাস করে জল পান করবেন, দেখবেন সারাদিন আর গ্যাস্ট্রিকের যন্ত্রণা সইতে হবেনা। কারণ জল হজম শক্তি বাড়াতে বেশ কার্যকরী একটি উপাদান। তাছাড়া জল পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার রাখতেও কাজ করে।
পরিশেষে বলব, গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া খুব বেশি কঠিন কিছু নয়। শুধু একটু নজর রাখতে হবে নিজের খাওয়া-দাওয়ার প্রতি। এখানে উল্লেখিত খবার গুলি নিয়মিত খাওয়া শুরু করুন তাহলে দেখবেন আপনাকে আর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগতে হবেনা। মুক্তি পাবেন গ্যাস্ট্রিকের ক্ষতিকর ট্যাবলেটের হাত থেকেও।