আর দু মাস পরই ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন৷ ইতিমধ্যেই ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বিজেপি৷ সেই প্রক্রিয়ার অঙ্গ হিসেবেই উত্তর পূর্ব ভারতের এই রাজ্যে বিজেপি ‘রথযাত্রা’ শুরু করতে চলেছে ৷ গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, এই রথযাত্রার মাধ্যমে বিজেপির নির্বাচনী প্রচারে দলের কর্মীদের সক্রিয়তা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভোটারদের মন জয়েরও চেষ্টা করবে ৷ ২০২৩ সালে একাধিক রাজ্যে রয়েছে বিধানসভা নির্বাচন। সেই তালিকায় রয়েছে উত্তর-পূর্বের ত্রিপুরাও। আর তার জন্য এখন থেকেই কোমর কষছে বিজেপি। আগামী ৫ জানুয়ারি ত্রিপুরায় যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেখানে তিনি বিজেপির রথযাত্রার সূচনা করবেন। রাজ্যে ফের গেরুয়ার ঝড় তুলতে তিনি সবুজ পতাকা হাতে নেবেন তিনি। সুবজ পতাকা নেড়েই সেই রথযাত্রার শুরু হবে।
একটি প্রেস বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, “আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে একটি রথযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে । নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে এই রথযাত্রা শুরু হবে । এই রথযাত্রা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও এর সাফল্য নিশ্চিত করতে রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে । এই কমিটির দায়িত্বে আছেন তথ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক টিঙ্কু রায়কে সহকারি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৷ এছাড়াও থাকবেন অমিত রক্ষিত ৷”
ত্রিপুরায় আটদিন ধরে চলবে এই রথযাত্রা। উত্তর ত্রিপুরা জেলার ধরমনগর থেকে এই যাত্রা শুরু হবে। রাজ্য বিজেপির সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য শুক্রবার জানিয়েছেন,আগামী ৫ জানুয়ারি দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার সাবরুমে একটি শোভাযাত্রায় অংশ নেবেন অমিত শাহ। শাসক দলের তরফে নির্বাচনমুখী রাজ্যে এই যাত্রার নামকরণ হয়েছে ‘জন বিশ্বাস যাত্রা’ । শুধুমাত্র অমিত শাহই নন। এই যাত্রায় অংশ নেবেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। তিনি যাত্রার শেষদিন অর্থাৎ, ১২ জানুয়ারি সমাপ্তি অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন। রাজনৈতিক মহলের মতে বিজেপিই এগিয়ে ৷ কিন্তু কোনওভাবেই তারা ঝুঁকি নিতে চায় না ৷ সেই কারণেই ভোট ঘোষণার আগেই প্রচারে জোর দিতে চায় তারা ৷ তাই গেরুয়া শিবিরের ট্রেডমার্ক রথযাত্রার উপর ভরসা করছে বিজেপি ৷
রাজ্যের মোট ৬০ টি বিধানসভা কেন্দ্র জুড়েই বিজেপির ‘জন বিশ্বাস যাত্রা’ যাবে। মোট ২০০ টি জনসভা এবং ১০০ টি মিছিল করবে শাসকদল। এই সব জনসভায় রাজ্য ও কেন্দ্রের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে। রাজীব ভট্টাচার্য বলেছেন, “‘জন বিশ্বাস যাত্রা’-র সময় প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে কারণ ৬০ টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে দিয়ে এই রথযাত্রা যাবে। কেন্দ্রের ও রাজ্যের উন্নয়নমূলক কার্যকলাপ তুলে ধরার জন্য মোট ২০০ টি জনসভা এবং ১০০ টি মিছিল করা হবে।” তিনি আরও জানিয়েছেন, কমপক্ষে ১০ জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমমন্ত্রীরা এবং বিভিন্ন কেন্দ্রীয় স্তরের নেতারা এই যাত্রায় অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই যাত্রাকে বিজেপির অন্য়তম বৃহত্তম রাজনৈতিক অনুষ্ঠান আখ্যা দিয়েছেন রাজ্যের তথ্য় ও সংস্কৃতি মন্ত্রী। বিজেপির এই প্রস্তুতি দেখে বলা যেতেই পারে উত্তর পূর্বের রাজ্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে এখন থেকেই উদ্যত। বিরোধী দলকে এক চুল জমি ছাড়তে নারাজ তাঁরা।
২০১৮ সালের নির্বাচনে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের নেতৃত্বে নির্বাচন লড়েছিল বিজেপি। ৬০ আসনের ত্রিপুরা বিধানসভায় গেরুয়া শিবির জিতেছিল ৩৬ আসনে। প্রধান প্রতিপক্ষ বামফ্রন্ট বামফ্রন্ট জিতেছিল ১৬ আসনে। আর স্থানীয় দল আইপিএফটি জিতেছিল ৮ আসনে। পরে তারা বিজেপি সরকারকেই সমর্থন করেছিল। চলতি বছরের মে মাসে বিপ্লব দেবকে সরিয়ে মানিক সাহাকে ত্রিপুরার নয়া মুখ্যমন্ত্রী মনোনীত করেছে বিজেপি।