বয়স দুশোরও বেশি, বিশ্বের একমাত্র ভাসমান ডাকঘর ভারতের কোথায় অবস্থিত জানেন?

banner

#PRAVATI SANGBAD DIGITAL DESK:

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি ডাকঘর রয়েছে ভারতে। ভারতীয় ডাক পরিষেবার ইতিহাসে ৫০০ বছরের বেশি সময় ধরে রয়েছে। যদিও ইন্টারনেটের যুগে প্রিয়জনকে হাতে চিঠি লেখার মানুষ এখনও কমে গিয়েছে। দেশের বেশ কিছু ডাকঘরের তো অস্তিত্বও মুছে গিয়েছে। তবু ভারতীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে রয়ে গিয়েছে ডাকঘর।

যদিও এরই মধ্যে এমন কিছু ডাকঘর রয়েছে যা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে এখন জনপ্রিয়। যার মধ্যে রয়েছে বিশ্বের উচ্চতম ডাকঘর, যা অবস্থিত হিমাচল প্রদেশের হিকিম গ্রামে। একই ভাবে বিশ্বের একমাত্র ভাসমান ডাকঘরও রয়েছে এ দেশেই। সেটি এখন হটস্পট।
পর্বতে ঘেরা জাবারওয়ান উপত্যকা। ছবির মতো সাজানো দৃশ্য। পাহাড়ের কোলের মধ্যেই বিশাল একটি হ্রদ। আর সেখানেই বসবাস কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষের। বাসস্থান, বাণিজ্য-ব্যবসা সবটাই ছোটো ছোটো নৌকায়। হাউসবোটে। হ্যাঁ, শ্রীনগরের ডাল লেকের কথাই হচ্ছে। হ্রদের জলে ভাসমান শতাব্দীপ্রাচীন এই সভ্যতার মধ্যেই অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে ভারত তথা গোটা বিশ্বের একমাত্র ভাসমান ডাকঘর। 
যে-কোনো সভ্যতার মূলমন্ত্রই হচ্ছে যোগাযোগ। শ্রীনগরের ডাল লেকের বুকে যখন ছোট্ট এই জনপদ গড়ে ওঠে, তখন ইন্টারনেট কিংবা ফোন— সবটাই স্বপ্নাতীত। সেসময় যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম বলতে চিঠি। আর শ্রীনগরের সঙ্গে কাশ্মীরের অন্যান্য অংশের যোগাযোগের সেই সেতু হিসাবেই গড়ে উঠেছিল ভাসমান ডাকঘর। কিন্তু ঠিক কবে এই ডাকঘরের জন্ম— সে ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য নেই কোনো। স্থানীয়দের মতে কাশ্মীরের এই ভাসমান ডাকঘরের বয়স কমপক্ষে ২০০ বছর। জম্মু-কাশ্মীরের ডোগরা শাসনের বিভিন্ন নথিতে (১৮৪৬-১৯৪৭) উল্লেখ পাওয়া যায় এই ডাকঘরের।

অবশ্য স্বাধীনতার পূর্বে দীর্ঘ সময় এই ডাকঘরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল ব্রিটিশ শাসকদের হাতে। ‘ফ্লোটিং পোস্ট অফিস’ নামকরণটিও করেন ব্রিটিশ পোস্টমাস্টার জন স্যামুয়েল। সেসময় জম্মু-কাশ্মীর এবং উত্তর ভারতের মধ্যে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছিল এই ডাকঘর। পরবর্তীতে এই ডাকঘরকে কেন্দ্র করেই পিন কোডও পায় ডাল লেকের ভাসমান সভ্যতা।
ছোট্ট কাঠের শিকারায় ভাসমান এই ডাকঘরে রয়েছে দু’টি কক্ষ। যার একটিতে রয়েছে ডাকঘরের কার্যনির্বাহী অফিস। অন্যটিতে রয়েছে আস্ত একটি জাদুঘর। যেখানে সংরক্ষিত আছে বহু ঐতিহাসিক ডাকটিকিট এবং ভারতীয় ডাকবিভাগের ইতিহাসের বিভিন্ন নথি। যদিও ২০১৪ সালে বন্যায় ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর আর নতুন করে প্রাণসঞ্চার হয়নি এই মিউজিয়ামে।
দূরে থেকে দেখলে মনে হবে না যে সেটা ভাসমান ডাকঘর। আর পাঁচটা সাধারণ শিকারা কিংবা হাউস বোটের মতোই কিছুটা দেখতে এই ভাসমান ডাকঘর। যদিও এই শিকারার সামনে টাঙানো রয়েছে ভারতীয় ডাকবিভাগের বোর্ড। বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘Indian Post’। প্রায় ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ডাকঘর পরিষেবা দিয়ে আসছে। যদিও বর্তমানে এটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এখন প্রিয়জনকে খুব একটা চিঠি পাঠান না কেউ। কিন্তু পর্যটনের মরশুমে এই ভাসমান ডাকঘরে উপচে পড়ে পর্যটকদের ভিড়।
এখানে শিকারার মাধ্যমেই চিঠিপত্র আসে এবং রাজ্যের অন্যান্য জায়গায় পৌঁছায়। পোস্টমাস্টার এবং অন্যান্য ডাককর্মীদেরও শিকারায় চেপেই আসতে হয়। শিকারায় চেপে ডাল লেক ঘোরার সময় পর্যটকেরা ঢুঁ মারেন এই ভাসমান ডাকঘরে। ডাকঘরের মতোই বিশেষ এখানকার ডাকটিকিটও। এই ভাসমান ডাকঘরের ডাকটিকিটে 'ডাল লেক'-এর ছাপ রয়েছে। ভাসমান ডাকঘরে একটি ফিলাটেলি মিউজিয়াম বা ডাকটিকিট সংগ্রহশালা রয়েছে। ডাকটিকিটের সমৃদ্ধ সংগ্রহ সেটি। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই ডাকঘরে এখন ইন্টারনেট পরিষেবাও রয়েছে।

#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image

Journalist Name : Sampriti Gole

Related News