সুন্দর রূপ কে না চায়। আজকাল নিজেকে সুন্দর করানোর জন্য চিকিৎসাবিদ্যা অনেক উন্নত হয়ে গেছে। কারোর নাক ছোটো বা কারোর ঠোঁট পাতলা আবার কারোর চুল কম। এইসবেরই সমাধান রয়েছে এখন। যুগ যত উন্নত হয়েছে ততই পাল্লা দিয়ে উন্নত হয়েছে চিকিৎসাবিদ্যা। বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে টাক একটি বিরক্তিকর ব্যাপার।
বাস্তব জীবনে এই টাকের জন্য পুরুষদেরকে লজ্জিত হতে হয় বহু জায়গায়। এমনকি বিয়ের জন্য পাত্রী পাওয়াও অসম্ভব হয়ে ওঠে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই নানান পদ্ধতি প্রয়োগ করে থাকে। এরমই এক পদ্ধতি হল হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট। এখন অনেকেই এই পদ্ধতির দ্বারা মাথা ভরা চুল পেয়ে থাকেন। টেলিভিশন চ্যানেলের কর্মী আথার রশিদও নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করিয়েছিলেন। ভালো , সুন্দরী পাত্রীর সাথে বিয়ের জন্য তিনি গেছিলেন হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করাতে।
রশিদের পরিবারের সদস্য চার। রশিদের মা আশিয়া বেগম জানান, গত বছর হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করানোর পরেই রশিদ সেপসিসে আক্রান্ত হন। এর ফলে মাথা ফুলে যায় ও চারিদিকে তা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। রশিদ প্রচণ্ড কষ্ট পাচ্ছিলেন। সংবাদকর্মীদের কাছে তাঁর মা বলেন, "আমার ছেলে খুব যন্ত্রণা সহ্য করে মারা গিয়েছে। ওর কিডনি কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। বাকি অঙ্গও বিকল হয়ে গিয়েছিল"। এই ঘটনায় রশিদের পরিবার স্থানীয় থানায় অভিযোগ জানান।
চারজন ব্যক্তি রশিদের হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করেন। অভিযোগ জানানোর পরপরই প্রত্যেককে পুলিশ আটক করেছে। রশিদের মা জানান, "আমি সন্তান হারিয়েছি। তবে কিছু ভুয়ো লোকের অসাধু কাজের জন্য যাতে আর কোনও মা সন্তান না হারাক তা আমি চাই না"। বহু বিশেষজ্ঞদের মতে, ভালো খাদ্যের অভাব, ধূমপান, মদ্যপানের মতো সমস্যা কম বয়সে চুল পড়ে যাওয়ার অন্যতম এক কারণ। একবার টাক পড়ে গেলে পুনরায় চুল গজানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে সমাধানের পথ দেখাতে পারে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই প্রক্রিয়ায় , মাথার যেখানে ঘন চুল থাকে সেখান থেকে হেয়ার ফলিকল তুলে ফাঁকা অংশে লাগানো হয়। মাসে গড়ে ১৫টি হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করেন এমন এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করতে আসা প্রায় সকল রোগীর বয়স ২৫ থেকে ৩৫ বছর। বিশেষত নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলতে তাঁরা হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করানোর জন্য আসেন।
হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করাতে খরচ হয় প্রায় ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। কোথাও না কোথাও নিজের অবস্থার উন্নতির থেকেও বাহ্যিক সৌন্দর্য অনেক বেশি জরুরি হয়ে বর্তমান যুব সমাজের কাছে। চিকিৎসকরা বলছেন, "সাধারণ মানুষের ধারণা, হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট পদ্ধতি সম্পূর্ণ ঝুঁকিহীন একটি প্রক্রিয়া। অথচ এই সার্জারিতে সময় লাগে অনেকখানি। প্রায় ৬ থেকে ৮ ঘণ্টাও লেগে যায়"। বহু বিশেষজ্ঞরা বলেন, "প্রভূত পরিমাণে লোকাল অ্যানাস্থেশিয়া প্রয়োগ করা হয়। কিছু সময় অন্তর তাই রোগীর শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করার দরকার পড়ে। সমস্যা হলে দিতে হয় কিছু দরকারি ওষুধ। ফলে যে সকল ব্যক্তির এই ডাক্তারি জ্ঞান নেই বা পরিস্থিতির অবনমন হচ্ছে কি না তা বোঝার মতো অভিজ্ঞতা নেই, তাঁর কাছে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করানো বিপজ্জনক হতে পারে"।