ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রণীত বিধবা বিবাহ আইন চালু হয়েছিল অনেক আগেই।কিন্তু সমাজ কি তা মেনে নিয়েছিল? আইন তো চালু হয়েছে কিন্তু সমাজ কি তা কার্যকর করেছিল? আর আজও কি সমাজে বিধবা বিবাহ দেওয়া হয়? ইতিহাস দেখিয়েছে স্বামী মারা গেলে স্ত্রীকেও সেই জ্বলন্ত চিতায় অনায়াসেই উঠে পড়তে হয়। এবং পরবর্তীতে সেই সমস্ত স্ত্রীদের অকালমৃত্যু আটকানো গেলেও সেই সমস্ত স্ত্রীদের নতুন করে জীবন শুরু করার কোন অধিকার ছিল না। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এনে দিলেন এমন একটি আইন যেখানে মৃত স্বামীর শোক সামলে সেই বিধবা স্ত্রী নতুন করে আবার তার বিবাহ জীবন শুরু করতে পারবে।
এমনই এক সিদ্ধান্ত নিলেন আসানসোলের কিশোর চট্টোপাধ্যায়।২০১৭ সালে তার ছেলের বিয়ে দিয়ে ঘরে নিয়ে আসেন বৌমাকে। কিছু দিন পর তার ঘর আলো করে আসে তার নাতনি।২ বছর পর সাপের কামড়ে মৃত্যু হয় ছেলের। স্বামী শোক নিয়ে তার মেয়েকে নিয়ে শশুর বাড়িতেই জীবন বয়ে চলে সেই বিধবা স্ত্রীর। এভাবেই ঘরের মেয়ের মতোই দেখা শোনা করেন বৌমাকে শশুর।
কিন্তু হঠাৎ ই তিনি এক সিদ্ধান্ত নেন,তিনি ভাবেন এই বিধবা বৌমাকে আগের জীবনে ফিরিয়ে দিতে তিনি পারবেন না কিন্তু তাকে একটি সুস্থ এবং জীবন দেবার চেষ্টা করেন তিনি। তাই তিনি সেই বিধবা স্ত্রীর আবার বিয়ে দিলেন। বিয়ে দিলেন ছেলেরই এক এক বন্ধুর সাথে। ছেলেটির নাম প্রভাত ফৌজদারি। ছেলেটির বাড়ির লোক রাজি থাকায় ছেলেটিও মৃত বন্ধুর বিধবা বউ পূজা চট্টোপাধ্যায় কে বিয়ে করতে দ্বিধা বোধ করেনি একবারও। তাই এইদিন কলিপাহারির ঘাগুরিয়া মন্দিরে প্রভাত ফৌজদারির সঙ্গে পূজা চট্টোপাধ্যায়ের বিবাহ সম্পন্ন হয়। দাড়িয়ে থেকে বিবাহ সম্পন্ন করেন শশুর কিশোর চট্টোপাধ্যায়।
এই ঘটনা স্মরণীয় হয়ে থাকবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এবং পরবর্তী ভবিষ্যত্ কি পারবে এই ভাবে কোনো বিধবা স্ত্রী কে আবার বিয়ে দিতে? অবশ্যই দেওয়া উচিত কারণ সেই আইন দেশে আছে। কিন্তু সমাজের কথা ভেবে পিছিয়ে আসে হাজারও বিধবা নারী। কিন্তু সকলের ভাবা উচিত এই সমস্ত নারী যারা কিনা নতুন বিয়ের পরেই কয়েক বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে তাদের সংসার জীবন। তাহলে কি তাদের বাকি জীবনটাও নিঃশেষ হয়ে গেছে? সমাজের ভাবা উচিত যে এর পরেও তাদের জীবন টা চলবে।এবং তাদের সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেওয়া আমাদের সকলের কর্তব্য।তাই আমরা সকলে সমর্থন করি বিধবা বিবাহে,যাতে বাকি জীবনটা তারা একা নয় বরং তার স্বামীর সাথেই কাটাতে পারে।
কিন্তু এই ঘটনা কি মেনে নেবে সমাজ? আর না নিলেই বা কি? থমকে যাবে না এই নব বিবাহিত দম্পতির জীবন।এই ঘটনা আমাদের সমাজকে এগিয়ে চলতে একটি দৃষ্টান্ত রূপে কাজ করবে।