#Pravati Sangbad Digital Desk:
দুর্গাপূজা বা দুর্গোৎসব হল দেবী দুর্গার পূজাকে কেন্দ্র করে প্রচলিত একটি উৎসব। দুর্গাপূজা সমগ্র ভারতে প্রচলিত। তবে বাঙালি সনাতনী সমাজে এটি অন্যতম বিশেষ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। আশ্বিন বা চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে দুর্গা মহাপূজা করা হয়। অবশ্য তন্ত্র শাস্ত্র মতে সকল স্থানই দুর্গার স্থান। সকল সময় দুর্গাপূজার সময়। যাইহোক, বছরে মূলত চারটি নবরাত্রি আসে। তার মধ্যে দুটি গুপ্ত নবরাত্রি। চারটি নবরাত্রিতেই শ্রী দূর্গার মহাপূজা হয়। আশ্বিনের নবরাত্রি পূজা শারদীয় পূজা এবং বসন্তের নবরাত্রির পূজা বাসন্তীক দুর্গাপূজা নামে পরিচিত। দুর্গাপূজা ভারত, বাংলাদেশ ও নেপাল সহ ভারতীয় উপমহাদেশ ও বিশ্বের একাধিক রাষ্ট্রে পালিত হয়ে থাকে। তবে হিন্দু বাঙালীর প্রধান উৎসব হওয়ার দরুন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যে ও বাংলাদেশে দুর্গাপূজা বিশেষ জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয়। এমনকি ভারতের অসম,বিহার, ঝাড়খণ্ড,মণিপুর এবংওড়িশা রাজ্যেও দুর্গাপূজা মহাসমারোহে পালিত হয়ে থাকে। ভারতের অন্যান্য রাজ্যে প্রবাসী বাঙালি হিন্দুগণ ও স্থানীয় জনসাধারণ নিজ নিজ প্রথামাফিক শারদীয়া দুর্গাপূজা ও নবরাত্রি উৎসব পালন করে। এমনকি পাশ্চাত্য দেশগুলিতে কর্মসূত্রে বসবাসরত বাঙালি হিন্দুরাও দুর্গাপূজা পালন করে থাকেন। ২০০৬ সালে গ্রেট ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামের গ্রেট হলে "ভয়েসেস অফ বেঙ্গল" মরসুম নামে একটি সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর অঙ্গ হিসেবে স্থানীয় বাঙালি হিন্দু অভিবাসীরা ও জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এক বিরাট দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন। সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয়া দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে "দুর্গাষষ্ঠী", "দুর্গাসপ্তমী", "মহাষ্টমী", "মহানবমী" ও "বিজয়াদশমী" নামে পরিচিত। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষটিকে বলা হয় "দেবীপক্ষ"। দেবীপক্ষের সূচনার অমাবস্যাটির নাম মহালয়া; এই দিন হিন্দুরা তর্পণ করে তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। দেবীপক্ষের শেষ দিনটি হল কোজাগরী পূর্ণিমা। এই দিন হিন্দু দেবী লক্ষ্মীর পূজা করা হয়। কোথাও কোথাও পনেরো দিন ধরে দুর্গাপূজা পালিত হয়। সেক্ষেত্রে মহালয়ার আগের নবমী তিথিতে পূজা শুরু হয়। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো যে কালিকা পুরাণে বলা হয়েছে, অষ্টাদশভুজা মহিষাসুরমর্দিনী উগ্রচণ্ডা তথা দশভুজার বোধন করা হবে কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে, ষোড়শভুজা ভগবতী ভদ্রকালীর বোধন করা হবে কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীতে এবং চতুর্ভুজা ও দশভুজা মহিষাসুরমর্দিনী বিগ্রহের বোধন করা হবে যথাক্রমে শুক্ল প্রতিপদ এবং শুক্লা ষষ্ঠীতে।পশ্চিমবঙ্গের বিষ্ণুপুর শহরের মৃন্ময়ী মন্দির এবং অনেক পরিবারে এই রীতি প্রচলিত আছে। পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরাতে দুর্গাসপ্তমী থেকে বিজয়াদশমী পর্যন্ত (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে দুর্গাসপ্তমী থেকে কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা পর্যন্ত) চার দিন সরকারি ছুটি থাকে। বাংলাদেশে বিজয়াদশমীতে সর্বসাধারণের জন্য এক দিন সরকারি ছুটি থাকে। পারিবারিক স্তরে দুর্গাপূজা প্রধানত ধনী পরিবারগুলিতেই আয়োজিত হয়। কলকাতা শহরের পুরনো ধনী পরিবারগুলির দুর্গাপূজা "বনেদি বাড়ির পূজা" নামে পরিচিত। পারিবারিক দুর্গাপূজাগুলিতে শাস্ত্রাচার পালনের উপরেই বেশি জোর দেওয়া হয়। পূজা উপলক্ষে বাড়িতে আত্মীয়-সমাগম হয়ে থাকে। অন্যদিকে আঞ্চলিক স্তরে এক একটি অঞ্চলের বাসিন্দারা যৌথভাবে যে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন তা বারোয়ারি পূজা বা সর্বজনীন পূজা নামে পরিচিত। ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের সময় সর্বজনীন পূজা শুরু হয়। মুলত দেবী দুর্গাকে মাথায় রেখেই দেশমাতা বা ভারতমাতা বা মাতৃভূমির জাতীয়তাবাদী ধারণা বিপ্লবের আকার নেয়। দেবী দুর্গার ভাবনা থেকেই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বন্দে মাতরম গানটি রচনা করেন যা ভারতের স্বাধীনতা-আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্র। সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখ বিল্পবী ও জাতীয়তাবাদী নেতারা বিভিন্ন সর্বজনীন পূজার সঙ্গে যুক্ত থাকতেন। এখন সর্বজনীন পূজায় "থিম" বা নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক মণ্ডপ, প্রতিমা ও আলোকসজ্জার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। থিমগুলির শ্রেষ্ঠত্ব বিচার করে বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে "শারদ সম্মান" নামে বিশেষ পুরস্কারও দেওয়া হয়। এছাড়া বেলুড় মঠ সহ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের বিভিন্ন শাখাকেন্দ্র এবং ভারত সেবাশ্রম সংঘের বিভিন্ন কেন্দ্রের সন্ন্যাসীরা দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। ঝাড়খন্ডের নিকটবর্তী পুরুলিয়া,পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জলপাইগুড়ির চা-বাগানে বিচ্ছিন্নভাবে বসবাসকারী অসুর জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা এই সময়টা শোক হিসেবে পালন করে।